ছয় ভুলে আটকে গেল এনসিপির নিবন্ধন, সময়সীমা ৩ আগস্ট

রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের স্বপ্নপূরণে বড় ধরনের হোঁচট খেল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির আবেদনে ছয়টি গুরুতর ত্রুটি খুঁজে পেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি), যা সংশোধনের জন্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৩ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা। নির্ধারিত এই তারিখের মধ্যে উপযুক্ত দলিলপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হলে দলটির নিবন্ধন প্রক্রিয়া অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে।

ইসি জানায়, দলটির দাখিল করা কাগজপত্রে সাংগঠনিক দুর্বলতা স্পষ্ট। আবেদনে সব জেলা ও উপজেলা দপ্তরের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দেওয়া হয়নি। এমনকি ঢাকা ও সিলেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলা দপ্তরের ভাড়ার চুক্তিপত্রেও দলের নাম উল্লেখ নেই। কিশোরগঞ্জের ইটনা এবং ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলা কার্যালয়ের চুক্তিপত্রেও একই ধরনের অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে হালুয়াঘাটের চুক্তিপত্রে কার্যালয়ের ঠিকানাও উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া, ২৫টি উপজেলায় দলের ন্যূনতম ২০০ জন ভোটার সদস্য থাকার শর্তও পূরণ হয়নি।

শুধু সাংগঠনিক কাঠামোই নয়, দলের আর্থিক স্বচ্ছতা ও অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এনসিপির আবেদনে তহবিলের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি এবং তহবিলের উৎস সংক্রান্ত বিবরণীও অসম্পূর্ণ। পাশাপাশি, নিবন্ধনের জন্য দলের কার্যনির্বাহী কমিটির যে সিদ্ধান্তের অনুলিপি জমা দেওয়া হয়েছে, তার শেষ পৃষ্ঠায় কোনো স্বাক্ষর নেই।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, দলের গঠনতন্ত্র এবং আইনগত ঘোষণাপত্রেও ঘাটতি রয়েছে। গঠনতন্ত্রে সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থী মনোনয়নের সুনির্দিষ্ট বিধান রাখা হয়নি। এছাড়া, দলের কোনো কার্যক্রম বা দলিল সংবিধান–পরিপন্থী নয় এবং দলে কোনো যুদ্ধাপরাধী বা দণ্ডিত ব্যক্তি নেই—এই মর্মে প্রয়োজনীয় প্রত্যয়নপত্রও আবেদনের সঙ্গে জমা দেওয়া হয়নি।

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এনসিপির মতো মোট ১৪৪টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। নির্বাচন কমিশন প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে ত্রুটিপূর্ণ আবেদনগুলো সংশোধনের জন্য সাধারণত ১৫ দিনের সময় দিয়ে থাকে। গত বৃহস্পতিবার এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বরাবর এই চিঠি পাঠানো হয়।

এদিকে, ইসির চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা ইসির চিঠি পেয়েছি। যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে, সেগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জমা দেওয়া হবে।’ এখন দেখার বিষয়, এনসিপি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব ত্রুটি সংশোধন করে নিবন্ধনের পথে টিকে থাকতে পারে কি না।