অন্তর্বর্তী সরকারের ‘সক্ষমতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তারেক রহমান

জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সময়ক্ষেপণের কোনো চেষ্টা চলছে কি না, সে বিষয়ে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক ও সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে আদৌ নির্বাচন আয়োজন সম্ভব কি না, এমন প্রশ্ন এখন আর বিচ্ছিন্ন কোনো বিষয় নয়।

শনিবার বিকেলে লন্ডনে থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এই আশঙ্কার কথা জানান। তারেক রহমান বলেন, সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া কিছু ‘নৃশংস ও অনাহূত’ ঘটনা অন্তর্বর্তী সরকারের সক্ষমতাকে জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো অংশের সহযোগিতায় একটি মহল দেশে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় মানুষের কথা শুনলে বোঝা যায়, এ বিষয়ে জনমনে জিজ্ঞাসা রয়েছে।’

‘গণ–অভ্যুত্থান ২০২৪: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবদান এবং শহীদদের স্মরণে স্মরণসভা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন (কেআইবি) মিলনায়তনে।

তারেক রহমান তার বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন, দেশে ফ্যাসিবাদের কাঠামো পুরোপুরি ভাঙতে হলে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তার মতে, জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে এমন একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রয়োজন, যেখানে ভোটাররা নির্ভয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা না গেলে কোনো আয়োজনই শেষ পর্যন্ত কিন্তু কাজে আসবে না, টেকসই হবে না।’

ভবিষ্যতে কোনো আবেগতাড়িত বা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে যেন চরমপন্থা কিংবা ফ্যাসিবাদ আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সে জন্য তিনি দেশবাসীকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস নাম উল্লেখ না করে জামায়াতের সাম্প্রতিক সমাবেশের দিকে ইঙ্গিত করে ভিন্ন একটি আশঙ্কার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি রাস্তার (শাহজাহানপুর) পাশে। খবর নিলাম ওখানে আওয়ামী লীগের ভালো ভালো মিছিল যাচ্ছে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘গতকাল (শুক্রবার) দেখলাম আরেকটা দলের পদযাত্রার কর্মসূচি, ওখানেও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে দেখা গেছে...আমরা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলব, আবার আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে মাথায় করে নাচব...এটা তো হতে দেওয়া যায় না।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গণতন্ত্র উত্তরণের যে স্বপ্ন, আমাদের সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে হলে আরও সজাগ হয়ে আরও সতর্কতার সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য কাজ করতে হবে।’

অন্যদিকে, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, দেশে গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলন এখনো শেষ হয়নি। বিএনপি ও ছাত্রদলের শত শত কর্মী এই আন্দোলনে রক্ত দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি গণতন্ত্র পুরোপুরি ফিরে না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মো. তৌফিকুল ইসলাম। এতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি মো. আবু হোরায়রাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।