ইনুর ‘চক্রান্তের’ অভিযোগ, ৪৫ জনের তদন্ত প্রতিবেদন ১৫ অক্টোবরের মধ্যে জমার নির্দেশ

‘অসৎ উদ্দেশ্যে আদালতের আদেশ ছাড়াই গোয়েন্দারা কারাগারে গিয়ে আমার ভয়েস রেকর্ড করেছে। আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে’—রবিবার (২০ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাঁড়িয়ে এমন বিস্ফোরক অভিযোগ করেন জুলাই-আগস্টের হত্যাযজ্ঞে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অন্যতম আসামি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

ইনুর এই অভিযোগের পরপরই তীব্র বিরোধিতা করেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি আদালতের আদেশপত্র দেখিয়ে বলেন, তদন্তের প্রয়োজনেই ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে হাসানুল হক ইনুর কণ্ঠের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। একইসঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন, আসামি নিজে কেন বারবার কথা বলে বিচার প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন, যেখানে তার পক্ষে বলার জন্য আইনজীবী রয়েছেন।

তবে ট্রাইব্যুনাল উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার বলেন, ‘ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমরা আসামির, প্রয়োজনে আসামিদের আত্মীয়-স্বজনেরও কথা শুনব।’

তদন্ত শেষ করতে তিন মাসের আল্টিমেটাম

এই উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের দিনেই জুলাই আন্দোলনে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের হওয়া পৃথক সাতটি মামলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও নেতা মিলিয়ে মোট ৪৫ জনের বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত আগামী তিন মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদেশে বলা হয়েছে, ১৫ অক্টোবরের মধ্যে অবশ্যই তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে হবে। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম তদন্ত সংস্থার পক্ষে সময় চেয়ে আবেদন করলে আদালত এই নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করে দেন।

কারা আছেন অভিযুক্তের তালিকায়?

রবিবার এই মামলার শুনানিতে ট্রাইব্যুনালে ৩৯ জন অভিযুক্তকে হাজির করা হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, আমির হোসেন আমু, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের মতো শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা।

অন্যান্য অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান, আব্দুর রাজ্জাক, কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী, কামরুল ইসলাম, সাবেক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাঙ্গীর আলম।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ও হত্যার নির্দেশদাতা এবং পরিকল্পনাকারী হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। এর আগে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুটি মামলার তদন্ত শেষ করতে ট্রাইব্যুনাল দুই মাসের সময় দিয়েছিলেন, যা পরে আরও দুই দফা বাড়ানো হয়। রবিবারের এই নতুন আদেশ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে চলমান সাতটি মামলার তদন্তে গতি আনবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।