হামাসের সঙ্গে নজিরবিহীন আলোচনায় তেল আবিব!

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা সম্পর্কে অবগত এক ইসরায়েলি রাজনৈতিক সূত্র শনিবার জানিয়েছে যে, তেল আবিব প্রথমবারের মতো হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ সমাপ্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করছে। ইসরায়েলের হারেৎজ পত্রিকাকে ওই সূত্র জানায়, ‘এই আলোচনা আগের চুক্তিগুলো বাস্তবায়নের আলোচনার চেয়ে ভিন্ন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগের চুক্তিগুলো যেখানে জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে সীমাবদ্ধ ছিল, এই চুক্তিটি সেখানে যুদ্ধ সমাপ্তির বিষয়টি নিয়ে। সুতরাং সবকিছুই আন্তঃসংযুক্ত। এটি একটি অত্যন্ত জটিল চুক্তি।’

সূত্রটি যোগ করে, প্রস্তাবিত চুক্তিতে ৬০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে। এই সময়ে ১০ জন জীবন্ত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং একইসঙ্গে যুদ্ধ সমাপ্তির জন্য নিবিড় আলোচনা শুরু হবে।

তিনি বলেন, এই আলোচনা ‘যুদ্ধ কীভাবে শেষ হবে বা চলবে, গাজায় কী ঘটবে এবং কীভাবে সকল জিম্মিকে ফেরত আনা হবে—সেসব বিষয়কে স্পর্শ করছে। চুক্তির কাঠামোর মধ্যে একটি সম্পূর্ণ ধারা রয়েছে, যা যুদ্ধ শেষ করার বিষয়ে আলোচনার জন্য রাখা হয়েছে। উভয় পক্ষই এতে নতুন বিষয় যুক্ত করতে পারবে এবং ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির মধ্যেই সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।’

সূত্রটি দাবি করেছে, ‘ইসরায়েলি প্রতিনিধিদল ব্যাপক কর্মপরিধি এবং সন্তোষজনক কর্তৃত্ব নিয়ে দোহায় গিয়েছে। ইসরায়েলের নিরাপত্তার মতো বিষয়ে আপস না করেও একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট নমনীয়তা রয়েছে।’

শুক্রবার ইসরায়েলি গণমাধ্যম, যার মধ্যে দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম ‘কান’ অন্তর্ভুক্ত, জানিয়েছে যে, কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ফিলিস্তিনি পক্ষ যদি চুক্তির বিস্তারিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে রাজি হয়, তবে ইসরায়েল দোহায় দ্বিতীয় একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর কথা বিবেচনা করছে।

খবরে বলা হয়, প্রস্তাবগুলোর মধ্যে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি অন্তর্ভুক্ত, যে সময়ে ১০ জন জীবন্ত জিম্মি এবং ১৮টি মরদেহ মুক্তি দেওয়া হবে। যুদ্ধবিরতি চলাকালীন যুদ্ধ শেষ করার বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা পুনরায় শুরু হবে।

ইসরায়েলি সম্প্রচারমাধ্যম অনুসারে, ত্রাণ সরবরাহ ব্যবস্থা এবং ইসরায়েলি সেনা মোতায়েনের মতো বিষয়গুলোতে মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েলি সূত্রগুলো এখনও এই চুক্তিকে সম্ভব বলে মনে করছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার গভীর রাতে ঘোষণা দিয়েছেন যে, গাজায় থাকা ১০ জন জিম্মিকে শিগগিরই মুক্তি দেওয়া হবে। গাজায় চলমান যুদ্ধে তার প্রশাসন ইসরায়েলকে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে আসছে। তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।

গত ২১ মাস ধরে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো এবং বন্দী বিনিময়ের জন্য একাধিক দফায় পরোক্ষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০২৩ সালের নভেম্বর এবং চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুটি আংশিক চুক্তিও হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অভিযুক্ত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সর্বশেষ চুক্তিটি চূড়ান্ত করা এড়িয়ে যান এবং গত ১৮ মার্চ থেকে পুনরায় যুদ্ধ শুরু করেন।

হামাস বারবার বলেছে, তারা গণহত্যা বন্ধ এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের বিনিময়ে ‘এক দফায়’ সমস্ত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে ইচ্ছুক।

যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ২০২৩ সালের শেষভাগ থেকে গাজায় এক নৃশংস আক্রমণ চালিয়ে আসছে, যেখানে প্রায় ৫৯,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এই অবিরাম বোমাবর্ষণে অবরুদ্ধ উপত্যকাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং তীব্র খাদ্য সংকট ও রোগের বিস্তার ঘটেছে।

গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, উপত্যকায় যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।