একা উড়ার দিনেই নিভে গেল তৌকিরের জীবনপ্রদীপ

ঘনবসতি এড়িয়ে বিমানটিকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার শেষ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তার প্রশিক্ষণ বিমানটি শেষ পর্যন্ত ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়। সোমবার দুপুরের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় পাইলট তৌকিরসহ মোট ২০ জন নিহত এবং দেড় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

যে দিনটি তৌকিরের জীবনে অর্জনের মাইলফলক হওয়ার কথা ছিল, সেদিনই নেমে এলো ঘোর অমানিশা। প্রশিক্ষণের সকল ধাপ সফলভাবে শেষ করে এই সোমবারই প্রথমবারের মতো একা বিমান নিয়ে আকাশে উড়েছিলেন তিনি। এই খবরে রাজশাহীর উপশহর এলাকায় তার পরিবারে বইছিল আনন্দের বন্যা, যা দুপুরের পর একটি খবরেই পরিণত হয় বিষাদে।

দুর্ঘটনার পরও দীর্ঘক্ষণ তৌকিরের পরিবার জানত, তিনি বেঁচে আছেন এবং ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন। বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত এই বিশ্বাস নিয়েই তারা অপেক্ষা করছিলেন। আহত সন্তানকে দেখতে ঢাকায় যাওয়ার জন্য পরিবারের সদস্যরা উদ্‌গ্রীব হলে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করা হয়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তৌকিরের বাবা তহুরুল ইসলাম, মা সালেহা খাতুন, বোন সৃষ্টি ও ভগ্নিপতিকে রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দর থেকে সেই হেলিকপ্টারে ঢাকায় পাঠানো হয়।

এদিকে, পাইলটের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাজশাহী নগরের উপশহর ৩ নম্বর সেক্টরে তাদের ‘আশ্রয় ভবন’ নামের ভাড়া বাসার সামনে সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষের ভিড় জমে। বাড়ির ভেতর থেকে ভেসে আসছিল স্বজনদের কান্নার রোল। বাসায় থাকা তৌকিরের নানা, নানি ও খালার আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। বাইরে শোকার্ত স্বজন ও উৎসুক জনতার ভিড় সামলাচ্ছিলেন তৌকিরের মামা মোতাকাব্বির।

তৌকিরের ডাকনাম ছিল সাগর। তার বাবা আমদানি-রপ্তানির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাদের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট এলাকায় হলেও পরিবারটি রাজশাহীতেই থাকত। মোতাকাব্বির জানান, তৌকির রাজশাহীর ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে সপ্তম শ্রেণি পাসের পর পাবনা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন। ২০১৭ সালে তিনি বিমানবাহিনীতে যোগ দেন এবং এক বছর আগে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকাকে বিয়ে করেন।

আইএসপিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এফটি-৭ বিজিআই মডেলের যুদ্ধবিমানটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছিল। সংস্থাটি বলেছে, ‘দুর্ঘটনা মোকাবিলায় এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের দোতলা একটি ভবনে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে।’