বেনজীরের বিলাসী জীবন: নিলামে উঠছে শত শত পোশাক-জুতা

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের গুলশানের ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট থেকে জব্দ করা বিপুল পরিমাণ ব্যক্তিগত সামগ্রী চলতি সপ্তাহেই নিলামে তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে হাজারো পোশাক, কয়েকশ জুতা এবং অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিস। মহানগর দায়রা জজ আদালতের নির্দেশে গঠিত একটি কমিটি সোমবার জানিয়েছে, এ সপ্তাহেই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিলাম আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সম্পদ ব্যবস্থাপনা শাখার পরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটি রাজধানীর গুলশান এলাকার র‍্যাংকন টাওয়ারে বেনজীরের মালিকানাধীন ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে পাওয়া জিনিসপত্র নিলামে তুলবে। র‍্যাংকন টাওয়ারের ১২/এ, ১২/বি, ১৩/এ এবং ১৩/বি—এই চারটি ফ্ল্যাট এক করে বেনজীর দম্পতি একটি বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স তৈরি করেন। সেখানে সুইমিং পুল, মিনি থিয়েটার রুম এবং অতিথি বিনোদনের জন্য আধুনিক বৈঠখানাসহ নানা সুবিধা রয়েছে।

নিলাম কমিটি ইতোমধ্যে ২৪৬ ধরনের জিনিসের একটি তালিকা তৈরি করেছে, যা বেনজীর পরিবারের বিলাসবহুল জীবনযাপনের চিত্র তুলে ধরে। কমিটির সদস্যরা একটি ফ্ল্যাটেই পেয়েছেন ১২২টি শার্ট, ২৬৬টি প্যান্ট, ৩০টি ব্লেজার, ৮টি স্যুট, ৭২২টি টি-শার্ট, ২২৪টি পাঞ্জাবি, ৮৮ জোড়া স্যান্ডেল, ৩৫ জোড়া কেডস, ৩৮ জোড়া জুতা, ৪৯৪টি শাড়ি, ২৫০ সেট থ্রিপিস, ২১২টি জামা, ৭৫টি ভ্যানিটি ব্যাগ, ৬২২টি লেডিস টপস এবং ৩৪টি সানগ্লাসসহ আরও অনেক কিছু।

তালিকা তৈরির সময় বেনজীর পরিবারের বিপুল পরিমাণ সামগ্রী দেখে কমিটির সদস্যরা অবাক হয়ে যান। তারা ফিলিপাইনের আশির দশকের কুখ্যাত মার্কোস দম্পতির কথা স্মরণ করেন। বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য পরিচিত ফিলিপাইনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফার্ডিনান্ড মার্কোস ও তার স্ত্রী ইমেলদা মার্কোসের সঙ্গে বেনজীর দম্পতির মিল খুঁজে পেয়েছেন কমিটির সদস্যরা। গণ-অভ্যুত্থানের মুখে মার্কোস দম্পতিকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছিল।

উল্লেখ্য, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ২০২৪ সালের ৪ মে তার স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে নতুন পাসপোর্ট ব্যবহার করে গোপনে দেশত্যাগ করেন। দুদক ও নিলাম কমিটির সদস্যদের ধারণা, বেনজীর দম্পতি দেশত্যাগের সময় ব্যাগভর্তি স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্গে নিয়ে গেছেন। ইতোমধ্যে দুদক তার বিরুদ্ধে ১১ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাচারের অভিযোগে একটি মামলা করেছে।

বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন। এর আগে তিনি র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) মহাপরিচালক এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।