অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর একক প্রভাবমুক্ত হয়ে গঠিত হতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দীর্ঘ আলোচনার পর সাংবিধানিক বাছাই কমিটির মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ সংলাপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। এর মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক সংস্কার সংলাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপে পৌঁছাল।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের লোগো

বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত কমিশনের ১৮তম দিনের সংলাপে এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই পরিবর্তনের জন্য সংবিধানে ১১৮(১ক) নামে একটি নতুন অনুচ্ছেদ যুক্ত করার বিষয়েও দলগুলো একমত হয়েছে।

নতুন প্রস্তাবনা অনুযায়ী, স্পিকারকে প্রধান করে একটি বাছাই কমিটি গঠিত হবে। এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকার এবং প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি। প্রথমে ৭ সদস্যের কমিটির প্রস্তাব করা হলেও বিএনপির আপত্তিতে তৃতীয় বৃহত্তম দলের প্রতিনিধিকে বাদ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে জামায়াতের প্রস্তাবে রাষ্ট্রপতির একজন প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সকলে সম্মত হন।

তবে নির্বাচন কমিশন নিয়ে এই ঐকমত্য তৈরি হলেও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান—যেমন সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি), ন্যায়পাল এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)—এর নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে মতপার্থক্য রয়ে গেছে। বিএনপি চায়, এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রচলিত আইনের মাধ্যমে হোক, যা নিয়োগের ক্ষমতা কার্যত সরকারের হাতেই রাখবে। অন্যদিকে, এনসিপির মতো দলগুলো ইসির মতো এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়াও সংবিধানের আওতায় এনে সংস্কারকে টেকসই করতে আগ্রহী।

অতীতে সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠিত হলেও সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির সকল সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে নেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। ফলে কার্যত প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাতেই কমিশন গঠিত হতো। নতুন ব্যবস্থায়, বাছাই কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে প্রতিটি পদের জন্য একটি মাত্র নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে এবং রাষ্ট্রপতি সেই নামগুলো থেকেই নিয়োগ দিতে বাধ্য থাকবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য সংবিধানে আলাদা প্রক্রিয়া না এনে আইনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তবে নির্বাচন কমিশনের বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় সংবিধানে উল্লেখ করা যেতে পারে।’ তিনি জানান, বাছাই কমিটি নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে পাওয়া নাম যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের এই ঐকমত্যকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘আজকের আলোচনা ঐক্য ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে হয়েছে, যা আগামী নির্বাচনের জন্য শক্তিশালী সাংবিধানিক ভিত্তি তৈরি করবে।’

তবে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ভিন্নমত প্রকাশ করে বলেন, ‘শুধু ইসি নয়, পিএসসি ও দুদকের মতো প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়াও সংবিধানে যুক্ত করা উচিত, নতুবা এই সংস্কার টেকসই হবে না।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, জনপ্রশাসন ও পুলিশের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এখনো আলোচনার বাইরে রয়ে গেছে।

ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ দলগুলোর ছাড় দেওয়ার মানসিকতার প্রশংসা করে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পূর্বের অবস্থান থেকে সরে এসে যে ঐকমত্যে পৌঁছেছে, তা একটি স্বাধীন ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার পথকে সুগম করবে।’

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.