ওয়াশিংটনের টেবিলে টোকিওর ক্ষোভ ও ট্রিলিয়ন ডলারের তাস

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার টেবিলে জাপানি প্রতিনিধিদের ক্ষুব্ধ আচরণ ওয়াশিংটনের কূটনীতিকদের বেশ অবাক করেছিল। মার্কিনিরা সাধারণত জাপানের সংযত ও ভদ্র আচরণের সঙ্গেই পরিচিত। শুধু তাই নয়, দর-কষাকষিতে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে জাপান তাদের হাতে থাকা ১.১ ট্রিলিয়ন ডলারের মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের ‘তাস’ ব্যবহারেরও ইঙ্গিত দিয়েছিল, যা ছিল আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়।

এই টানাপোড়েনের সমাপ্তি ঘটেছে একটি বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে, যাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি ‘বড় চুক্তি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তার মতে, ক্ষমতায় আসার পর গৃহীত আগ্রাসী বাণিজ্য নীতির ফল এখন মিলতে শুরু করেছে। যদিও চুক্তির বিস্তারিত দিকগুলো নিয়ে কোনো পক্ষই এখনও পুরোপুরি মুখ খোলেনি, তবে এর ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

চুক্তিটি এমন এক সময়ে সম্পন্ন হলো, যখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা টোকিওতে অবস্থান করছিলেন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে জাপান, ইইউ ও কানাডার একজোট হয়ে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার যে গুঞ্জন উঠেছিল, তা কার্যত থেমে গেল।

চুক্তির বিস্তারিত এখনও পুরোপুরি প্রকাশ করা না হলেও এটি স্পষ্ট যে, জাপান বড় ধরনের ক্ষতি এড়াতে পেরেছে। দেশটির পণ্যের ওপর প্রস্তাবিত ২৫ শতাংশ শুল্কের হুমকির বদলে এখন ১৫ শতাংশ সাধারণ শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। এর বিনিময়ে জাপান যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি চাল আমদানিতে সম্মত হয়েছে এবং নিজেদের কৃষি খাতকে সুরক্ষিত রাখতে পেরেছে।

চুক্তি অনুযায়ী, জাপানের বেসরকারি খাতকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় অর্ধ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হতে পারে, যা মার্কিন অর্থনীতির জন্য একটি বড় প্রাপ্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেসব দেশের বড় বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে, তাদের মধ্যে জাপানই সবচেয়ে কম ক্ষতিকর একটি চুক্তি আদায় করতে সক্ষম হয়েছে।

তবে প্রশ্ন উঠেছে, জাপান কেন আরও কিছুদিন অপেক্ষা করল না? বিবিসির অর্থনীতি সম্পাদক ফয়সাল ইসলামের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আগামী ১ আগস্ট ট্রাম্পের শুল্ক নীতি কয়েকটি দেশের ওপর কার্যকর হওয়ার পর আন্তর্জাতিক বাজারে এর প্রতিক্রিয়া দেখে জাপান সিদ্ধান্ত নিতে পারত। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিকভাবে দুর্বল অবস্থান এর একটি কারণ হতে পারে।

বৃহৎ প্রেক্ষাপটে, এক বছর আগেও যা অকল্পনীয় ছিল, অর্থাৎ প্রধান মিত্রদের ওপর মার্কিন শুল্ক আরোপ, তা এখন বাস্তবতা। আর বড় ক্ষতির আশঙ্কায় দেশগুলো সেই বাস্তবতা মেনেও নিচ্ছে।