এজলাসে তোপের মুখে নিশ্চুপ খায়রুল হক

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে কিশোর আব্দুল কাইয়ূম আহাদকে হত্যা মামলায় বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাতে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্যাহর আদালত শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। আদালতের এজলাসে উপস্থিত আইনজীবীদের তীব্র ক্ষোভ ও তিরস্কারের মুখে পুরোটা সময় তিনি ছিলেন নিশ্চুপ ও নির্বাক।

এদিন সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে আদালতে আনার পর থেকেই গোটা চত্বরজুড়ে ছিল টানটান উত্তেজনা। রাত সোয়া আটটার দিকে যখন কড়া পুলিশি পাহারায় খায়রুল হককে এজলাসে তোলা হয়, তখন বিএনপিপন্থী আইনজীবী ও বিক্ষুব্ধ জনতা স্লোগান দিতে থাকেন। শুনানির শুরুতেই আইনজীবীরা তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন।

ঢাকা বারের সভাপতি খোরশেদ মিয়া আলম আদালতকে বলেন, ‘এই খায়রুল হকের ইন্ধনে হত্যাযজ্ঞ হয়েছে। উনি বিচার ব্যবস্থাকেও পাপাচারে ভরে ফেলেছেন।’ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘উনার কলমের খোঁচায়... তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিল করে যে নির্বাচনের কারিগর, তিনিই এই খায়রুল হক।’

শুনানিতে আরেক আইনজীবী আবুল কালাম বলেন, ‘শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট হওয়ার কারিগর এই বিচারক।’ অতিরিক্ত পিপি আজিজুল হক দিদার মন্তব্য করেন, ‘ইনি (খায়রুল হক) হাসিনার কৃতদাস ছিলেন। আইনের শাসন আছে, এজন্য উনাকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। বিচারব্যবস্থা ভালো না থাকলে জনগণ উনাকে গণপিটুনি দিত।’

আইনজীবীদের এমন সব অভিযোগের তীরে যখন তিনি বিদ্ধ, তখন সাবেক এই প্রধান বিচারপতি কাঠগড়া ধরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার ক্লান্ত চোখ-মুখে ছিল বিষণ্ণতার ছাপ। পুরো শুনানিতে তিনি একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। রাত ৮টা ৩২ মিনিটে আদালতে বিদ্যুৎ চলে গেলে বিচারক মোবাইলের আলোয় মামলার কার্যক্রম চালিয়ে যান এবং মন্তব্য করেন, ‘শ্রদ্ধা মানুষকে কর্মের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। সবাইকে কর্মের ফল ভোগ করতে হয়।’ এর কিছুক্ষণ পরই তিনি এজলাস ত্যাগ করেন এবং খায়রুল হককে কারাগারে পাঠানোর আদেশ কার্যকর হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ পরিদর্শক খালেদ হাসান তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদনে বলেন, আসামি অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং জামিনে মুক্তি পেলে তদন্তে ব্যাঘাত ঘটাতে পারেন। আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রধান বিচারপতি থাকাকালে খায়রুল হকের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ীর কাজলা পুলিশ বক্সের সামনে গুলিতে নিহত হন কিশোর আব্দুল কাইয়ূম আহাদ। এই ঘটনায় তার বাবা মো. আলাউদ্দিন বাদী হয়ে ৪৬৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও প্রায় দুই হাজার জনকে আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলাতেই গ্রেপ্তার হলেন বাংলাদেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, যিনি ২০১১ সাল পর্যন্ত এই পদে দায়িত্ব পালন করেন।