ব্রিটিশ রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা

যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির সাবেক প্রধান ও বামপন্থী রাজনীতিক জেরেমি করবিন একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) তিনি ও তার সহযোগী সাবেক লেবার দলীয় সংসদ সদস্য জারা সুলতানা এক যৌথ বিবৃতিতে এই নতুন দলের রূপরেখা তুলে ধরেন। দলের নাম এখনও চূড়ান্ত না হলেও এটিকে আপাতত ‘ইয়োর পার্টি’ বা ‘তোমার দল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে করবিন ও সুলতানা বলেন, ‘এখন এমন এক নতুন ধারার রাজনৈতিক দলের সময় এসেছে, যার ভিত্তি হবে আমাদের জনগোষ্ঠী, শ্রমিক সংগঠন ও সামাজিক আন্দোলনগুলো।’ তাদের দলের প্রধান লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে—ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে সম্পদ ও ক্ষমতার পুনর্বণ্টন, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করা এবং একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সমর্থন জানানো।

৭৬ বছর বয়সী করবিন ২০১৭ ও ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টির ভরাডুবির পর দলীয় প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। ২০২০ সালে কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বে লেবার পার্টি তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে। দলের অভ্যন্তরে ইহুদি-বিদ্বেষ সংক্রান্ত এক তদন্তের ফলাফল পুরোপুরি মানতে অস্বীকৃতি জানানোয় তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। যুক্তরাজ্যের সমতা ও মানবাধিকার কমিশনের ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, করবিনের নেতৃত্বে লেবার পার্টি দেশের সমতা আইন লঙ্ঘন করেছে। তবে করবিনের দাবি, ইহুদি-বিদ্বেষের বিষয়টি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অতিরঞ্জিত করা হয়েছিল’।

চলতি বছরের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লন্ডনের ইসলিংটন নর্থ আসন থেকে বিপুল ভোটে জয়ী হন। এই আসনে তিনি গত ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

অন্যদিকে, ২০১৯ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত জারা সুলতানাকে গত বছর লেবার পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়। শিশু কল্যাণ ভাতায় আরোপিত সীমাবদ্ধতা বাতিলের পক্ষে ভোট দেওয়ায় তিনি দলের বিরাগভাজন হন, যা তৎকালীন সমাজকল্যাণ নীতি নিয়ে দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজন স্পষ্ট করে তোলে।

বিশ্লেষকদের মতে, করবিনের এই উদ্যোগ যুক্তরাজ্যের চিরাচরিত দ্বিদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। বর্তমানে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি ও বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টির পাশাপাশি লিবারেল ডেমোক্র্যাটস, নাইজেল ফারাজের রিফর্ম ইউকে এবং গ্রিন পার্টিও দেশটির রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে লিবারেল ডেমোক্র্যাটস ৭২টি, রিফর্ম ইউকে পাঁচটি এবং বামপন্থী গ্রিন পার্টি চারটি আসন লাভ করে।

অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, লেবার পার্টির যে সমস্ত বামপন্থী ভোটার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে ‘অতিমাত্রায় ডানপন্থী’ বলে মনে করেন, তাদের একটি অংশ করবিনের নতুন দলে যোগ দিতে পারে। তবে সাভানতা জরিপ সংস্থার রাজনৈতিক বিশ্লেষক ক্রিস হপকিনস বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে একটি শক্তিশালী বামপন্থী জনতুষ্টিবাদী দলের জন্য জায়গা থাকলেও, করবিন সেই শূন্যস্থান পূরণ করার মতো নেতা হতে পারবেন কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।’

সূত্র: আরব নিউজ