প্রধানমন্ত্রীর ঠিকানা চূড়ান্ত! মন্ত্রীদের আবাসন নিয়ে জটিলতা
- Details
- by ২৪ ডেস্ক
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের বাসভবন ‘গণভবন’ এখন ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’-এ রূপান্তরিত হচ্ছে। আগামী ৫ আগস্ট উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা এই জাদুঘরের কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভবিষ্যৎ সরকারপ্রধানদের জন্য একটি নতুন ও স্থায়ী বাসভবনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এই সংকট নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশে গঠিত একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি তাদের সুপারিশ জমা দিয়েছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর নতুন বাসভবন হিসেবে হেয়ার রোডকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফারুক আহম্মেদের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের কমিটি গত ২০ জুলাই তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। সুপারিশ অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনা’ এবং এর সংলগ্ন হেয়ার রোডের ২৪ ও ২৫ নম্বর বাংলোকে একীভূত করে প্রধানমন্ত্রীর জন্য একটি সুরক্ষিত ও সমন্বিত বাসভবন কমপ্লেক্স তৈরি করা যেতে পারে। বর্তমানে ‘যমুনা’ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রায় সোয়া তিন একরের এই বিশাল চত্বর নিরাপত্তা ও অন্যান্য সুবিধার দিক থেকে সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে করছে কমিটি।
যদিও শেরেবাংলা নগরে সাবেক বাণিজ্য মেলার খালি জায়গার কথাও ভাবা হয়েছিল, তবে দুটি প্রধান কারণে কমিটি তা নাকচ করে দেয়। প্রথমত, এলাকাটি স্থপতি লুই আই কানের মূল নকশার অংশ হওয়ায় সেখানে বড় কোনো নির্মাণকাজ নকশার পরিপন্থী হবে। দ্বিতীয়ত, নতুন করে পরিকল্পনা ও নির্মাণ একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া, যা আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগে শেষ করা কঠিন।
মন্ত্রীদের আবাসন সংকট: ফ্ল্যাট আছে, কিন্তু থাকার উপায় নেই
প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সমাধান মিললেও নতুন সরকারের মন্ত্রীদের আবাসন নিয়ে তৈরি হয়েছে এক ভিন্নধর্মী সংকট। কাগজে-কলমে মন্ত্রীদের জন্য রাজধানীতে ১৫টি বাংলো এবং বেইলি রোডের ‘মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্টে’ ৩০টি ফ্ল্যাটসহ মোট ৪৬টি বাড়ির ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্টের ৩০টি ফ্ল্যাটের একটি বড় অংশই বর্তমানে সরকারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ব্যবহার করছেন।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৩০টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ১২টিতে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিরা এবং বাকি ১৮টির মধ্যে ১৪টিতে উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, নির্বাচন কমিশনার ও দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনাররা বসবাস করছেন। যদিও বিচারপতি ও সচিবদের জন্য নির্ধারিত আবাসিক ভবনে একাধিক ফ্ল্যাট খালি পড়ে আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাবেক বিচারপতি মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত ফ্ল্যাটে বিচারপতিদের বসবাসকে ‘অনৈতিক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। অন্যদিকে, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ফ্ল্যাটগুলো খালি পড়ে থাকায় তা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল এবং নতুন সরকার গঠনের পর সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তিদের উচ্ছেদ করা ‘বিব্রতকর’ হবে। এই পরিস্থিতি এড়াতেই মন্ত্রীদের জন্য বিকল্প আবাসন খোঁজা হচ্ছে।
সমাধানের পথে সরকার: ভাঙা হবে ঐতিহাসিক বাংলো?
মন্ত্রীদের আবাসন সংকট কাটাতে কমিটি একাধিক প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো মিন্টো রোডের ৩৩ ও ৩৪ নম্বর এবং বেইলি রোডের ২০ ও ২১ নম্বর বাংলোকে একত্রিত করে বহুতল ভবন নির্মাণ করা। এই চারটি বাংলোর জায়গায় দুটি ছয়তলা ভবন নির্মাণ করা গেলে অন্তত ২৪ জন মন্ত্রীর থাকার ব্যবস্থা হতে পারে।
তবে এই প্রস্তাব একটি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। মিন্টো ও বেইলি রোডের এই বাংলোগুলো কেবল সরকারি বাড়ি নয়, এগুলো রাজধানীর ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক ঐতিহ্যের অংশ। তাই স্থাপত্য অধিদপ্তর ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া এসব স্থাপনা ভাঙা কতটা যৌক্তিক হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ঐতিহাসিক বাংলো ভাঙার পাশাপাশি বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে ধানমন্ডি ও গুলশানে সরকারের দুটি পরিত্যক্ত বাড়িতেও মন্ত্রীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণের কথা ভাবা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কমিটির প্রধান ফারুক আহম্মেদ জানিয়েছেন, নির্বাচিত নতুন সরকারের আবাসন নিশ্চিত করতে একটি পূর্ণাঙ্গ সুপারিশমালা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.