সাখাওয়াত: বিদেশি অপারেটর নিয়োগ হলেও বন্দরের ব্যবস্থাপনা আমাদের হাতেই থাকবে

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) জন্য বিদেশি অপারেটর নিয়োগের সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়ে নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, এর মূল উদ্দেশ্য বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং বৈশ্বিক অঙ্গনে প্রবেশ করা। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হলেও বন্দরের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা আগের মতোই দেশীয় কর্তৃপক্ষের হাতে থাকবে।

আজ (শুক্রবার) সকালে চট্টগ্রাম বন্দরে নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিদেশি অপারেটর নিয়োগ সংক্রান্ত সরকারের পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি শুধু অপারেটর নিয়োগের বিষয়। ভুলে যাবেন না যে আমি বন্দরের ব্যবস্থাপনার কথা বলছি না। অপারেটর এক জিনিস, ব্যবস্থাপনা আরেক জিনিস। ব্যবস্থাপনা আমাদের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সামনে এগোতে চাই। আমরা বৈশ্বিক অঙ্গনে পা রাখতে চাই। আমরা নিজেদের মধ্যে আটকে থাকতে চাই না।’

সম্প্রতি সরকার এনসিটির অন্তর্বর্তীকালীন পরিচালনার দায়িত্ব সাবেক অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের কাছ থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডকে (সিডিডিএল) ছয় মাসের জন্য হস্তান্তর করেছে। বিদেশি অপারেটর নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সিডিডিএল এই টার্মিনাল পরিচালনা করবে। সরকার বর্তমানে টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ডিপি ওয়ার্ল্ড’-এর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যা করতে যাচ্ছি তা হলো পুরোনো অপারেটরের জায়গায় নতুন অপারেটর নিয়োগ দেওয়া। এর একমাত্র উদ্দেশ্য হলো দক্ষতা বৃদ্ধি করা। কারণ আমি বিভিন্ন বৈশ্বিক বন্দর পরিদর্শনকালে তাদের কার্যক্রম দেখেছি। আমার কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই, আমি এমনকি চট্টগ্রামের বাসিন্দা নই।’

বিদায়ী বেসরকারি অপারেটর সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যে বেসরকারি অপারেটর গত ১৭ থেকে ১৮ বছর ধরে এনসিটি এবং আরেকটি টার্মিনাল চালিয়েছে, তারা ভালো কাজ করেছে। কিন্তু সরকার এখন তাদের চেয়েও আরও দক্ষতার সঙ্গে এই টার্মিনাল পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে।’

সাখাওয়াত মনে করেন, চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বের অনেক বন্দরের চেয়ে পিছিয়ে আছে। আন্তর্জাতিক বন্দর পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের রপ্তানি পণ্যের কন্টেইনারের একটি বড় অংশ সিঙ্গাপুর বন্দরে ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য পাঠানো হয়। সেই কন্টেইনারগুলো সিঙ্গাপুর বন্দরে দুই দিনের বেশি থাকতে পারে না।’ তিনি আরও যোগ করেন যে সিঙ্গাপুর এবং অন্যান্য অনেক দেশের বেশিরভাগ বন্দরই বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

তিনি মন্তব্য করেন, ‘বর্তমানে আমরা আমাদের বন্দরগুলো দক্ষতার সঙ্গেই চালাচ্ছি। কিন্তু দক্ষতা আরও বাড়ানোর জন্য আমাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখতে হবে। দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিদেশ থেকে প্রযুক্তিগত জ্ঞান আনা জরুরি।’

উপদেষ্টার মতে, কোনো বন্দরে বৈশ্বিক অপারেটর যুক্ত হলেই সেটি সত্যিকার অর্থে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবেশ করে।

এনসিটির কার্যক্রমে সাম্প্রতিক উন্নতির বিষয়ে সাখাওয়াত বলেন, সিডিডিএল দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে টার্মিনালে কন্টেইনার ওঠানামা গড়ে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে পরবর্তী নিযুক্ত অপারেটর এই উন্নতির ধারা বজায় রাখবে।

পরিদর্শনের সময় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান, বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডের (সিডিডিএল) কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।