চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল বাড়ছে ৩০ শতাংশ, ৩৮ বছর পর সমন্বয়

আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রমে চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল গড়ে ৩০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সকালে বন্দর পরিদর্শনের পর গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন এই ঘোষণা দেন।

উপদেষ্টা বলেন, ‘১৯৮৬ সালের পর এই প্রথম মাশুল সমন্বয় করা হলো। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও যোগ করেন, এই পদক্ষেপ রাজস্ব বাড়াতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হলেও, এটি আমদানি ও রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের খরচও বাড়াতে পারে।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সরকারের লক্ষ্য চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে এটিকে বিশ্বমঞ্চে একটি উন্নত অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। এই লক্ষ্য অর্জনে বন্দরের পরিচালন ব্যবস্থা ব্যবস্থাপনার জন্য বিদেশি পরিচালনাকারী সংস্থা নিয়োগ করা হতে পারে। তবে তিনি আশ্বাস দেন যে, সার্বিক নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি সরকারের হাতেই থাকবে। উপদেষ্টা বিদেশি পরিচালনাকারী নিয়োগের বিষয়ে কোনো ধরনের ভুল তথ্য না ছড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আহ্বান জানান।

এম সাখাওয়াত হোসেন উল্লেখ করেন যে, গত ৭ জুলাই সাইফ পাওয়ারটেকের কাছ থেকে নৌবাহিনী পরিচালন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বর্তমানে টার্মিনালটিতে কন্টেইনার ওঠানামা প্রায় ১৩ শতাংশ বেড়েছে এবং দৈনিক গড়ে ৩,২০০ কন্টেইনার ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে।

উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড ১৬ বছর পর এনসিটির দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এরপর থেকে টার্মিনালটি আধুনিক উপরিকাঠামো এবং আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধাসহ উন্নত কার্যকারিতা প্রদর্শন করছে। তিনি পূর্ববর্তী পরিচালনাকারী সংস্থার ভূমিকারও প্রশংসা করেন।

বন্দর পরিদর্শনের সময় নৌপরিবহন উপদেষ্টা এনসিটিতে চলমান কন্টেইনার ওঠানামা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন এবং সাম্প্রতিক অগ্রগতি সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করা হয়।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর ইরশাদ আলী জানান, চট্টগ্রাম ড্রাইডকের ব্যবস্থাপনায় ৭ জুলাই থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত এনসিটিতে দৈনিক গড়ে ৩,২৫০ টিইইউএস (টোয়েন্টি-ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট) কন্টেইনার ওঠানামা হয়েছে, যা পূর্ববর্তী মাসের একই সময়ের তুলনায় ১২.১০ শতাংশ বেশি। তিনি আরও বলেন, এই সময়ে ৩০টি জাহাজ সফলভাবে কন্টেইনার কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে এবং জাহাজের অবস্থানকাল (টার্নঅ্যারাউন্ড টাইম) ১০ ঘণ্টা কমে এসেছে।

বর্তমানে এনসিটির ২, ৩, ৪ ও ৫ নম্বর জেটিতে একযোগে চারটি জাহাজের কার্যক্রম চলছে। বন্দর ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, চট্টগ্রাম ড্রাইডকের কার্যকর ব্যবস্থাপনার ফলে বন্দরের সামগ্রিক কার্যক্রমে গতি এসেছে, যা আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়াকে আরও দক্ষ করে তুলেছে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।