ফ্রান্সের পথে হাঁটছে না জার্মানি, এখনই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি নয়

ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বৈশ্বিক চাপের মুখেও ফ্রান্সের বিপরীত অবস্থান নিয়েছে জার্মানি। শুক্রবার বার্লিন জানিয়েছে, স্বল্প মেয়াদে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।

জার্মান সরকারের মুখপাত্র স্টেফান কর্নেলিউস বার্লিনে এক বিবৃতিতে বলেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পথে ‘চূড়ান্ত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে একটি’ হিসেবেই বার্লিন এই স্বীকৃতিকে বিবেচনা করে। তার মতে, এই সমাধান অবশ্যই আলোচনার মাধ্যমে আসতে হবে, যা ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি উভয়ের জন্য দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

তিনি আরও বলেন, ‘জার্মান সরকারের অগ্রাধিকার এখন সবচেয়ে জরুরি বিষয়গুলোতে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করা।’ এই বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা, হামাসের হাতে থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি এবং সংগঠনটির নিরস্ত্রীকরণ।

এর আগে বৃহস্পতিবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ঘোষণা দেন যে, প্যারিস আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে।

এদিকে, এই ইস্যুতে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস-এর নেতৃত্বাধীন মধ্য-ডানপন্থী সরকার অভ্যন্তরীণভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি) তেল আবিবের ওপর আরও কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। দলটি সম্প্রতি ইসরায়েলে জার্মান অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ এবং ইসরায়েলের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগী চুক্তি স্থগিত করার জন্য আবারও আহ্বান জানিয়েছে।

শুধু রাজনৈতিক দলই নয়, বর্তমান কূটনীতিকদের মধ্য থেকেও ভিন্নমত প্রকাশ পাচ্ছে। সংবাদ সাময়িকী ‘ডের স্পিগেল’-এর এক প্রতিবেদন অনুসারে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রায় ১৩০ জন কর্মকর্তা একটি অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী তৈরি করেছেন, যারা জার্মানির ইসরায়েল নীতিতে পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছেন।

অন্যদিকে, জার্মান সরকারের মুখপাত্র গাজায় ‘বিপর্যয়কর মানবিক পরিস্থিতির অবিলম্বে ও drastic উন্নতি’ সাধনের জন্য ইসরায়েলের প্রতি তাদের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। কর্নেলিউস বলেন, ‘দুর্ভোগে থাকা বেসামরিক জনগণের জন্য মানবিক ও জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় পরিষেবা নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি আরও যোগ করেন যে, একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিকে স্থায়ী শান্তিতে রূপ দিতে হলে গাজার জন্য একটি টেকসই রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। ইসরায়েলকে অবশ্যই ‘পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণের দিকে আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে’।

মুখপাত্র জানান, জার্মান সরকার এই বিষয়ে ইসরায়েলি সরকার এবং তার আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে ক্রমাগত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘অগ্রগতির অভাব হলে চাপ বাড়ানোর জন্য বার্লিন প্রস্তুত।’

তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে সমর্থনের মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের শর্ত তৈরির জন্য বার্লিন তার সহায়তা অব্যাহত রাখবে।