পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণে ইসরায়েলকে তুরস্কের কড়া হুঁশিয়ারি

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার কাঙ্ক্ষিত সুযোগ পেলে দখলকৃত পশ্চিম তীর সংযুক্ত করতে এক মুহূর্তও দ্বিধা করবেন না। তবে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থের জন্য কখনোই মঙ্গলজনক হবে না।

শুক্রবার তুরস্কের সম্প্রচারমাধ্যম এনটিভি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফিদান এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, নেতানিয়াহু যদি পরিস্থিতি অনুকূলে বলে মনে করেন, তাহলে তিনি পশ্চিম তীর দখলে ইতস্তত করবেন না। তার মানসিকতা চরমপন্থী। কিন্তু আগামী দশকগুলোতে এটি ইসরায়েলের কোনো উপকারে আসবে না।’

গাজায় ইসরায়েলের প্রায় দুই বছরব্যাপী চলমান সামরিক অভিযানকে ‘নারকীয় উন্মত্ততা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ফিদান বলেন, এটি এখন একটি বৈশ্বিক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মতে, গুটিকয়েক দেশ ছাড়া বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রই এখন আর ইসরায়েলের পাশে নেই। আন্তর্জাতিক মতামতের এই পরিবর্তন তুলে ধরে তিনি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সমর্থনের কথা উল্লেখ করেন। ফিদান বলেন, ‘মার্কিন রাজনীতিবিদ ছাড়া ইসরায়েলের বর্তমান জায়নবাদী মানসিকতার প্রতি আর কোনো প্রকাশ্য সমর্থন আমরা দেখছি না।’

যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা প্রসঙ্গে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিনটি প্রধান প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করেন: গাজায় কে ত্রাণ বিতরণ করবে, ইসরায়েলি স্থলবাহিনীর প্রত্যাহার এবং হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তির পর যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখার নিশ্চয়তা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েল শুধু ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমেই নয়, বরং সেখানকার মানুষকে অনাহারে রেখেও গাজাকে বসবাসের অযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করছে।

ফিদান আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি শরণার্থী গ্রহণে তাদের রাজি করানোর চেষ্টা করছেন। এটি মূলত ‘ফিলিস্তিনিবিহীন গাজা’ তৈরির একটি প্রকল্প।’

গত ২৩ জুলাই ইসরায়েলি সংসদ কর্তৃক পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণের প্রস্তাব অনুমোদনের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি সরাসরি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে ধ্বংস করার একটি অপপ্রয়াস। ‘আপনি এমন কিছু ধ্বংস করতে চাইছেন যা ১৯৬৭ সালের সীমান্তের ভিত্তিতে বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। আলোচনার মাধ্যমে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান এখন না মানলে, ভবিষ্যতে আপনাদের আরও বড় ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হবে’, বলেন তিনি।

রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনা

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আলোচনায় তুরস্কের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন হাকান ফিদান। তিনি জানান, ইস্তাম্বুলে সাম্প্রতিক ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে মানবিক সহায়তা বিনিময় এবং একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তার মতে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের আয়োজনে একটি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে উভয় পক্ষই আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি উপস্থিত থাকতে পারেন। ফিদান বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির বিষয়ে পুতিন ও জেলেনস্কির ভিন্ন ভিন্ন পূর্বশর্ত রয়েছে। মধ্যস্থতাকারীদের এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। একই রকম সদিচ্ছা নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকলে, আমি বিশ্বাস করি, আরও কয়েক দফা বৈঠকের পর আমরা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সমাধানে পৌঁছাতে পারব।’

অন্যান্য কূটনৈতিক প্রসঙ্গ

তুরস্কের ইউরোফাইটার টাইফুন যুদ্ধবিমান চুক্তি প্রসঙ্গে ফিদান জানান, প্রক্রিয়াটি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে বিস্তারিত কারিগরি কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং চুক্তির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এছাড়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ভিসা সহজীকরণের বিষয়ে অগ্রগতির কথাও জানান তিনি।

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার উত্তেজনা নিয়ে তিনি বলেন, তিনি মনে করেন না যে ইরান প্রথমে আক্রান্ত না হলে হামলা চালাবে। তার মতে, উভয় দেশই জুনে সংঘটিত ১২ দিনের যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিয়েছে এবং ভবিষ্যতে তাদের অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করতে পারে।

সবশেষে, ইস্তাম্বুলে আসন্ন ‘বলকান শান্তি মঞ্চ’ বৈঠক প্রসঙ্গে ফিদান জানান, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, মন্টিনিগ্রো, কসোভো, উত্তর মেসেডোনিয়া, সার্বিয়া এবং আলবেনিয়ার নেতারা সাধারণ উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করতে এবং ‘ভবিষ্যতের জন্য একটি ভালো উত্তরাধিকার’ রেখে যেতে তুরস্কে একত্রিত হবেন।