ঢাবির একাত্তর হলে তাণ্ডব, ঘটনার মূল হোতা দুই ছাত্রলীগ নেতা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে ছাত্রলীগের সিট দখল, প্রাধ্যক্ষের কার্যালয় ভাঙচুর এবং সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় দুই ছাত্রলীগ নেতার নাম উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ওই ঘটনার মাস্টার মাইন্ড ছিলেন।

ঘটনার তদন্ত কমিটি ওই দুই নেতাসহ ১৩ মার্চ গভীর রাতে হলটিতে চালানো তাণ্ডবের সঙ্গে মোট ১৬ জনের সরাসরি অংশ গ্রহণের প্রমাণ পেয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে ওই ঘটনার জন্য মোট চারটি সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঘটনার এক সপ্তাহ আগে হল দখলের পরিকল্পনা করে হল শাখা ছাত্রলীগ। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তারা দফায় দফায় বৈঠক করে।

বৈঠক করে তারা হামলার ছক আঁকার পর গত ১৩ মার্চ রাতে হলের সীট দখল করতে শুরু করে। এসময় হলে আতঙ্ক ছড়াতে ভাঙচুর ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া করে। ভোর রাত চারটার দিকে হামলা চালানো হয় ইউএনবির বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ইমরান হোসেনের উপর। এরপর ঘটনার তদন্তে হলের আবাসিক শিক্ষক আসিফ হোসেন খানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। গত ৩ এপ্রিল রোববার উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় এই কমিটি।

তদন্ত কমিটি হলের ক্লোজসার্কিট ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজ দেখে ও বিভিন্ন সংবাদপত্রে ঘটনার সঙ্গে যেসব জড়িত ছাত্রের নাম এসেছে তাদের বক্তব্য নিয়ে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নেয়। কমিটি মোট ২২ জনের জবানবন্দি নেয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ফকির রাসেল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক নয়ন হাওলাদারের নির্দেশে হল প্রাধ্যক্ষের কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়। হলের দুজন অনাবাসিক ছাত্র, ইসলামিক শিক্ষা বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র মোবাশ্বির হোসাইন খান ও দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র মো. জর্জ হল প্রাধাক্ষের কক্ষ ভাংচুর করেন।

ভাঙচুরের ঘটনায় উসকানি দাতা ও তাদের পালিয়ে যেতে সহায়তাকারী হিসেবে নাম এসেছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের রাইব আহমেদ রিজয়, ইসলামিক শিক্ষা বিভাগের আবু ইউনুস, পালি ও বুডঢিস্ট স্টাডিজ বিভাগের আবু বকর সিদ্দিক, ট্যুরিজম বিভাগের রায়হান ইসলাম ইমন ও ভাষাবিজ্ঞানের কাজী তানভীর আহম্মেদের।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন রাতে হলের আসন দখলের উদ্দেশে প্রথমে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি গ্রুপ বিজয় একাত্তর হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। ওই গ্রুপের লক্ষ্য ছিল রুম দখল করে হলের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেওয়া। প্রতিবেদনে সাংবাদিকের ওপর হামলায় মোট সাতজনকে চিহ্নিত করা হয়। ইসলামের ইতিহাসের শিপন মিয়া, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দেওয়ান সাবাব, ইসলামিক শিক্ষার মোশারফ হোসেন, উর্দু বিভাগের সাইদুর রহমান, দর্শন বিভাগের জিহাদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইমরান ও সমাজবিজ্ঞানের শামীম মুখে গামছা বেঁধে ওই সাংবাদিককে মারধর করে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান বলেন, 'আমরা প্রাথমিক যে তথ্য পেয়েছি তার আলোকে পাঁচ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে পারি না। এই প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। এর প্রতিবেদন এখনও পাইনি। পেলে এর আলোকে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।'

এই প্রতিবেদনের আলোকে দায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে-জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, 'দোষীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধীদের কোন ছাড় দেয়া হবে না।'