দাবি না মানলে দেশজুড়ে ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট

দেশজুড়ে তিন দিনের পরিবহন ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দিয়েছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের শীর্ষ সংগঠনগুলো। সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ ৮ দফা দাবি আগামী ১১ আগস্টের মধ্যে পূরণ না হলে পরদিন ১২ আগস্ট ভোর ৬টা থেকে টানা ৭২ ঘণ্টা সারাদেশে সব ধরনের বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও প্রাইমমুভার চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

রবিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই কঠোর কর্মসূচির কথা জানায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।

সংবাদ সম্মেলনের মূল焦点 ছিল সরকারের সাম্প্রতিক একটি সিদ্ধান্ত, যেখানে ২০ থেকে ২৫ বছরের পুরোনো বাণিজ্যিক যানবাহন রাস্তা থেকে অপসারণে বিআরটিএ-কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের জেরেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মালিক-শ্রমিকরা ধর্মঘটের ডাক দিতে শুরু করলে একটি জাতীয় অচলাবস্থার আশঙ্কা তৈরি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত ২০ জুলাই কেন্দ্রীয় সংগঠনগুলো এক যৌথ সভায় বসে এবং সরকারকে ১৫ কার্যদিবসের সময় দিয়ে সমস্যা সমাধানের অনুরোধ জানায়। সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই এই নতুন আল্টিমেটাম দেওয়া হলো।

লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম বলেন, ‘১১ আগস্টের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে পরদিন ১২ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে ১৫ আগস্ট সকাল ৬টা পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টা দেশে সব প্রকার বাণিজ্যিক পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকবে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা একটি সুশৃঙ্খল, যানজটমুক্ত, দুর্ঘটনামুক্ত ও চাঁদাবাজমুক্ত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’

পরিবহন খাতের ৮ দফা দাবিগুলো হলো:

• আইন সংশোধন: সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ৯৮ ও ১০৫ নম্বর ধারাসহ বিতর্কিত ধারাগুলো সংশোধন করতে হবে।
• গাড়ির বয়সসীমা: বাণিজ্যিক গাড়ির ইকোনমিক লাইফ ২০-২৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করতে হবে এবং মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি শুধু মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে ফিটনেস থাকা সাপেক্ষে চলার পুরনো নিয়ম বহাল রাখতে হবে।
• অভিযান স্থগিত: পুরোনো গাড়ি অপসারণে বিআরটিএ-এর চলমান অভিযান দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখতে হবে।
• আয়কর হ্রাস: বাণিজ্যিক যানবাহনের ওপর বাজেটে আরোপিত দ্বিগুণ অগ্রিম আয়কর বাতিল করে আগের হার বহাল করতে হবে।
• আমদানি সুবিধা: পুরোনো গাড়ি প্রতিস্থাপনের জন্য রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানির সময়সীমা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করতে হবে।
• স্ক্র্যাপ নীতিমালা: মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির জন্য একটি সুষ্ঠু স্ক্র্যাপ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
• মহাসড়ক সুরক্ষা: মহাসড়কে অনুমোদনহীন তিন চাকার যানবাহন ও ধীরগতির গাড়ির জন্য পৃথক লেন নিশ্চিত করতে হবে।
• অন্যান্য দাবি: ড্রাইভিং লাইসেন্স দ্রুত সরবরাহ এবং শ্রমিক ফেডারেশনের ১২ দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি কফিল উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষ এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আব্দুর রহিম বক্স দুদুসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।