এক বছর আগের এই দিনে, ২৭ জুলাই ২০২৪, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে আরও দুজন শীর্ষ নেতাকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম এবং হাসনাত আবদুল্লাহকে আটকের মধ্য দিয়ে এই আন্দোলনের মোট পাঁচজন শীর্ষ নেতা ডিবি হেফাজতে চলে যান। যদিও পুলিশ জানিয়েছিল বিভিন্ন তথ্য জানতেই তাদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এবং কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি, এই ঘটনায় আন্দোলনকারীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।

২০২৪ সালের ২৭ জুলাই পুলিশের নির্বিচার হত্যা, হামলা, মামলা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদ নারীদের প্রতিবাদ সমাবেশ।

এর মাত্র একদিন আগেই, ২৬ জুলাই, চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকা আন্দোলনের আরও তিন পরিচিত মুখ—নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ এবং আবু বাকের মজুমদারকে ঢাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়। আন্দোলনের অন্যান্য সমন্বয়করা অভিযোগ করেন, আটক নেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে দেওয়া হচ্ছে না এবং তারা আইনি সহায়তা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। নেতৃত্বের এই শূন্যতায় দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনটি ছত্রভঙ্গ হওয়ার উপক্রম হয়। 

তিন দফা আল্টিমেটাম

ডিবি হেফাজতের প্রতিবাদ জানিয়ে ২৭ জুলাই রাতেই অনলাইনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। তাদের তিনটি দাবি। তা হলো: আটক সব শিক্ষার্থীর নিঃশর্ত মুক্তি, দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার এবং শিক্ষার্থী নিহতদের ঘটনায় মন্ত্রী পর্যায় থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা।

সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, সরকার বলছে আন্দোলনের মূল দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কমিশন গঠনের কথা ছিল—তা না করে একতরফাভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

সমন্বয়ক হান্নান মাসুদের হুঁশিয়ারি, এই দাবি না মানা হলে ২৮ জুলাই থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি আসবে।

‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’: হাসিনা বিতর্ক

এই দিনে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনায় পরিণত হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’ মন্তব্য। ২৭ জুলাই পঙ্গু হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আর যেন মায়ের কোল খালি না হয়।” কিন্তু পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, সেদিন হাসিনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কোনো চিকিৎসা না দেওয়ার ও কাউকে ছেড়ে না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এই মন্তব্যের তথ্য–প্রমাণ রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। এতে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিবিসি, দ্য ডেইলি স্টার এবং আলজাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সরাসরি গুলির নির্দেশ নিয়ে আরও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

ডিবি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ, নুর প্রসঙ্গ

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে ২০ জুলাই তুলে নেওয়ার পর তার অবস্থান নিশ্চিত হয়নি। পরে স্ত্রী মারিয়া আক্তার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নুর এখন হাঁটতেও পারেন না, নির্যাতনের মাত্রা এতটাই ছিল। তিনি চিকিৎসা এবং রিমান্ড বন্ধের দাবি জানান।

২৬৬ জন নিহত, ৭ হাজারের বেশি গ্রেপ্তার

আন্দোলনকারীদের দাবি, সহিংসতায় অন্তত ২৬৬ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এর বাইরে দেশজুড়ে ৭৩৬টির বেশি মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তার হয়েছেন ৭ হাজারের বেশি। ঢাকাতেই মামলা ২০৭টি, গ্রেপ্তার ২,৫৩৬ জন। র‍্যাবও আলাদাভাবে ৭১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। অধিকাংশ মামলার বাদী পুলিশ।

আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিক্রিয়া

১৪টি বিদেশি দূতাবাস এক যৌথ চিঠিতে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে জানায়, তারা পরিস্থিতিতে ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারকে লেখা চিঠিতে ১৪০ জনের বেশি আন্তর্জাতিক বুদ্ধিজীবী পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

কারফিউ শিথিল, সেনা টহল, সরকারি সময়সূচি বদল

এই দিন রাজধানী ঢাকাসহ চার জেলায় সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। পরে বিকেল ৫টার পর ফের কারফিউ শুরু হয়। রাজধানীতে সেনা টহল জোরদার করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২৮-৩০ জুলাই অফিস সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা নির্ধারণ করেছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন। অন্যদিকে রওশন এরশাদ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার দাবি জানান।

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “আক্রমণকারীদের মূল আক্রোশ ছিল পুলিশ ও আওয়ামী লীগের ওপর।”

তিনি সেনা মোতায়েনকে ‘শান্তির লক্ষ্যে জরুরি পদক্ষেপ’ হিসেবে ব্যাখ্যা দেন।

এদিকে ২৭ জুলাই সারা দেশে গ্রাফিতি, দেয়াল লিখন এবং দূতাবাসে স্মারকলিপি কর্মসূচির পাশাপাশি, ২৮ জুলাই থেকে ‘হেলথ ফোর্স’ ও ‘লিগ্যাল ফোর্স’ গঠনের মাধ্যমে আহত-নিহতদের সহায়তা ও মামলার ডকুমেন্টেশন কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.