ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার রাজনৈতিক টানাপোড়েনের প্রভাব এখন সরাসরি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে পড়তে শুরু করেছে। চলতি ভারতীয় অর্থবছরের তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) বাংলাদেশে ভারতের পণ্য রপ্তানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে এই চিত্র উঠে এসেছে, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কে এক নতুন সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের পতাকা

মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশে মোট ২৬০ কোটি ৯ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। অথচ গত বছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ২৭৭ কোটি ২৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার। অর্থাৎ, মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি কমেছে ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ। কেবল জুন মাসেই এই পতন আরও স্পষ্ট; গত বছরের জুনের তুলনায় এ বছর জুনে রপ্তানি কমেছে ১১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।

দুই দেশের মধ্যে এই বাণিজ্য ঘাটতির নেপথ্যে রয়েছে পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা। গত ৮ এপ্রিল ভারত আকস্মিকভাবে কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে অন্য দেশে পণ্য পাঠানোর জন্য বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে। এর ঠিক এক সপ্তাহ পর, ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বেনাপোল, ভোমরাসহ প্রধান স্থলবন্দরগুলো দিয়ে ভারত থেকে সুতা এবং আরও কিছু পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

এই নিষেধাজ্ঞাগুলোর পেছনের কারণও বেশ জটিল। দেশীয় বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ’র দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে এনবিআর ভারতীয় সুতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। অন্যদিকে, ভারতও বসে থাকেনি। গত ১৭ মে তৈরি পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং ২৭ জুন পাটজাত পণ্য ও কাপড় আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটি। এসব পণ্য এখন কেবল নির্দিষ্ট সমুদ্রবন্দর দিয়েই আমদানি করা যাবে, যা বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল।

ইন্ডিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইবিসিসিআই) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ এই পরিস্থিতিকে ‘দুই দেশের সরকারের মধ্যে বিরাজমান টানাপড়েনের’ ফল হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়েছে বাণিজ্যে। স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহনে খরচ ও সময় কম লাগে... স্বাভাবিকভাবেই ভারতের রপ্তানি বা বাংলাদেশের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়েছে। বিধিনিষেধের প্রভাবে দুই দেশই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত।’

আশ্চর্যজনকভাবে, গত মার্চে শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ ভারতীয় অর্থবছরে এই রাজনৈতিক তিক্ততার কোনো প্রভাব বাণিজ্যে পড়েনি। ওই অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে ১ হাজার ১৪৫ কোটি ডলারের বেশি পণ্য আমদানি করেছিল, যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে বেশি ছিল। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুই দেশের অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা এতটাই গভীর যে রাজনৈতিক অস্থিরতা সহজে তাতে প্রভাব ফেলতে পারে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেনের মতে, ‘অর্থনীতির নিয়ম এবং রাজনীতির নিয়মে পার্থক্য রয়েছে।’ তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এই টানাপোড়েন দীর্ঘমেয়াদি হলে অর্থনৈতিক সম্পর্কে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়া অবশ্যম্ভাবী, যার প্রতিফলন হয়তো এপ্রিল-জুনের পরিসংখ্যানে দেখা যেতে শুরু করেছে।

বণিক বার্তা অবলম্বনে

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.