ক্ষণিকের ওয়াকআউট, বেরিয়ে এসে যা বললেন বিএনপি নেতা

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রাখার প্রশ্নে জোরালো অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। এ নিয়ে সৃষ্ট মতপার্থক্যের জেরে সংলাপের মাঝপথে কিছু সময়ের জন্য ওয়াকআউট করেন দলটির প্রতিনিধিরা। যদিও ঘণ্টাখানেকেরও কম সময়ের মধ্যে তারা আবার সংলাপে ফিরে আসেন।

ঘটনাটি ঘটে আজ সোমবার, চলমান সংলাপের ২০তম দিনে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং মহাহিসাব নিরীক্ষকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের বিধান নিয়ে আলোচনা শুরু হলে মতবিরোধ স্পষ্ট হয়। প্রস্তাবিত পরিবর্তনে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হতে পারে—এমন আশঙ্কায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও ইসমাইল জবিউল্লাহ বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান। পরে ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে তারা পুনরায় আলোচনায় যোগ দেন।

ওয়াকআউটের পর সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, একটি ভারসাম্যপূর্ণ রাষ্ট্র পরিচালনায় নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ব অপরিহার্য। তার ভাষায়, ‘নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহিতা যেমন সংসদের কাছে, তেমনি জনগণের কাছেও রয়েছে। কিন্তু যদি কর্তৃত্ব না থাকে, কেবল দায়িত্ব আর জবাবদিহিতা থাকে, তাহলে তা কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা কমানো হলে তা ভবিষ্যতের জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে।

তবে এই মতপার্থক্য সত্ত্বেও সংলাপের সামগ্রিক অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে বিএনপি। সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, তাদের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব ইতোমধ্যে গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—যেকোনো ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকার সময়সীমা সর্বোচ্চ ১০ বছর নির্ধারণ, এবং নির্বাচন কমিশন গঠনে সরকারি দল, বিরোধী দল ও বিচার বিভাগের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি স্বাধীন সার্চ কমিটি গঠন।

পাশাপাশি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে ভবিষ্যতে সংসদে আনা যেকোনো সংশোধনী রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আগে গণভোটে দেওয়ার যে প্রস্তাব বিএনপি দিয়েছিল, সেটিও গৃহীত হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এটিকে তিনি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি ‘বড় পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেন।

সংলাপ থেকে সাময়িক ওয়াকআউটকে গণতন্ত্রের স্বাভাবিক চর্চার অংশ হিসেবেই দেখছে বিএনপি। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সব বিষয়ে ঐক্যমত হবে এমন দাবি কেউ করেনি। দ্বিমত থাকবে, ভিন্নমত থাকবে, আর সেগুলোর মধ্য দিয়েই তো গণতন্ত্রের সংগ্রাম এগিয়ে যায়।’

তিনি স্পষ্ট করেন, বিএনপি একটি গঠনমূলক লক্ষ্য নিয়ে সংলাপে অংশ নিচ্ছে এবং পরবর্তী আলোচনাতেও তারা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত।