হাসনাত আবদুল্লাহ: চাঁদাবাজের অভয়াশ্রম হবে না এনসিপি

ময়মনসিংহের বৃষ্টিভেজা বিকেলে নিজেদের ঘর থেকেই ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করার দৃপ্ত ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি এবং কর্মসূচিতে নিষ্ক্রিয় থেকে শুধু ‘সেলফি-বাণিজ্য’ করা নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দলের শীর্ষ নেতারা। একইসঙ্গে, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের দাবিতে আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত করার জন্য সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে দলটি।

সোমবার বিকেলে নগরের টাউন হল মাঠে আয়োজিত ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ পরবর্তী পথসভায় দলের এই দ্বিমুখী অবস্থান স্পষ্ট করা হয়।

সভায় দলের মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের নাম ব্যবহার করে অনেকে চাঁদাবাজিতে যুক্ত হচ্ছেন—এই জিনিস আমরা বরদাশত করব না। আমাদের লাখ লাখ কর্মীর দরকার নেই। এই চাঁদাবাজের অভয়াশ্রম এনসিপি হবে না।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আরেক ধরনের নেতা-কর্মী আছে, যারা তেলবাজ ও সেলফিবাজ। কর্মসূচিতে নেই, শুধু নেতার পেছনে ঘুরে সেলফি তুলে ফেসবুকে বাণিজ্য করে। এদের প্রতিহত করতে হবে। আগে নিজের ঘর ঠিক করতে হবে।’

অন্যদিকে, দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম দেশের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জুলাই সনদে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঐকমত্য চাই এবং সেটা ৫ আগস্টের মধ্যে হতেই হবে।’ এই সনদের আওতায় নির্বাচন কমিশন, দুদক ও পিএসসির মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিরপেক্ষ নিয়োগের জন্য একটি কমিটি গঠন এবং নিরপেক্ষ প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

নাহিদ ইসলাম ময়মনসিংহবাসীর প্রতি ঢাকায় ৩ আগস্টের সমাবেশে যোগদানের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা আকাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ এখনো পাইনি। বিগত সরকার শুধু মানুষ বা গণতন্ত্রকেই হত্যা করেনি, প্রাণ-প্রকৃতি ও নদীগুলোকেও হত্যা করেছে। আমরা পরিবেশবান্ধব ও সুষম উন্নয়ন করতে চাই।’ তিনি ব্রহ্মপুত্র নদের দুরবস্থার কথা উল্লেখ করে অবকাঠামোগত উন্নয়নে ময়মনসিংহ পিছিয়ে পড়েছে বলেও মন্তব্য করেন।

সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক থেকে বিএনপির সাময়িক ওয়াকআউটের কড়া সমালোচনা করেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, ‘শহীদদের রক্ত ও আহতদের অঙ্গহানির ওপর দাঁড়িয়ে যখন আমরা নতুন বাংলাদেশের যাত্রা করছি, তখন একটি দল ওয়াকআউট করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আপনারা (বিএনপি) শহীদদের রক্তের সঙ্গে ওয়াকআউট করতে পারেন না।’ সাবেক সরকারের দমন-পীড়নের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘যখন আমাদের ওপর গুলি চালানো হয়েছিল, আমরা কী গুলির মুখ থেকে ওয়াকআউট করেছিলাম?’

এর আগে, বিকেল পৌনে পাঁচটায় নগরের শহীদ সাগর চত্বর থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পদযাত্রার শুরুতে নেতারা শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

সভায় আরও বক্তব্য দেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা এবং ময়মনসিংহে শহীদ সাগরের বাবা মো. আসাদুজ্জামান।

সমাবেশ ও পদযাত্রা ঘিরে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে সভাস্থলসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে র‍্যাব ও সাড়ে পাঁচ শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিল।