আপনি পড়ছেন

জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে মঙ্গলবার দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে ‘নিউইয়র্ক ঘোষণা’ গৃহীত হয়েছে। ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর গাজায় সৃষ্ট তীব্র দুর্ভিক্ষ ও ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে এই ঘোষণাটি ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত নিরসনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ফিলিস্তিনের পতাকা

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের নিরবচ্ছিন্ন হামলায় ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। লাগাতার বোমাবর্ষণে পুরো উপত্যকাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এর ফলে অনাহারে কমপক্ষে ১৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৮৯ জনই শিশু।

সৌদি আরব ও ফ্রান্সের যৌথ সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘ফিলিস্তিন প্রশ্নের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি ও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনীতে এই ঘোষণাটি দেওয়া হয়।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘আমরা গাজায় যুদ্ধ শেষ করতে, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের একটি ন্যায্য, শান্তিপূর্ণ ও দীর্ঘস্থায়ী নিষ্পত্তিতে পৌঁছাতে এবং ফিলিস্তিনি, ইসরায়েলি ও এই অঞ্চলের সব মানুষের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে সম্মিলিত পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছি।’

ঘোষণায় আরও বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতের কারণে ‘ভয়াবহ মানবিক মূল্য’ দিতে হচ্ছে এবং এর ফলে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি এবং নিরাপত্তার ওপর যে গুরুতর প্রভাব পড়ছে, তা সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে ‘আরও একবার, এবং আগের চেয়ে অনেক বেশি স্পষ্টভাবে’ ফুটে উঠেছে।

এতে যোগ করা হয়, ‘দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের দিকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ এবং শক্তিশালী আন্তর্জাতিক নিশ্চয়তা ছাড়া এই সংঘাত আরও গভীর হবে এবং আঞ্চলিক শান্তি অধরাই থেকে যাবে।’

সম্মেলনে তুর্কি কর্মকর্তারা মন্তব্য করেন, ‘ইসরায়েলের কয়েক দশকের কর্মকাণ্ড বিবেচনায়, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অস্ত্র সমর্পণের বিষয়টি অবশ্যই পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭ সালের সীমান্তের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও অবিচ্ছিন্ন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে শর্তযুক্ত হতে হবে। অথবা ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সমঝোতা প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কোনো চুক্তির মাধ্যমে তা হতে হবে।’

তুরস্ক, ফ্রান্স, সৌদি আরব, ব্রাজিল, কানাডা, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জাপান, জর্ডান, মেক্সিকো, নরওয়ে, কাতার, সেনেগাল, স্পেন, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরব লিগ এই ঘোষণাকে সমর্থন জানিয়েছে।

‘গাজাকে পশ্চিম তীরের সঙ্গে একীভূত করতে হবে’

ঘোষণাপত্রে গাজায় অবিলম্বে ইসরায়েলি যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে সব পক্ষকে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ফিরিয়ে আনতে মিশর, কাতার ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করা হয়।

স্থায়ীভাবে শত্রুতা বন্ধ, সব জিম্মির মুক্তি, ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়, সব মরদেহ ফেরত দেওয়া এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারসহ চুক্তির সব ধাপ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

যুদ্ধবিরতির পর গাজায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অধীনে একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনিক কমিটি প্রতিষ্ঠারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ঘোষণাপত্রে। এতে পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে যে, গাজা ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ’ এবং একে অবশ্যই দখলকৃত পশ্চিম তীরের সঙ্গে ‘একীভূত করতে হবে’। শাসন, আইন প্রয়োগ এবং নিরাপত্তাব্যবস্থা একমাত্র ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকবে এবং এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক সহায়তা দেওয়া হবে।

‘এক রাষ্ট্র, এক সরকার, এক আইন, এক অস্ত্র’ নীতিকে স্বাগত জানিয়ে এটি বাস্তবায়নে সমর্থনের অঙ্গীকার করা হয়েছে। এর আওতায় আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্মত একটি কাঠামোর অধীনে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নিরস্ত্রীকরণ, সেনাবিলুপ্তি ও পুনঃএকীকরণ (ডিডিআর) প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হবে।

শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের পাশাপাশি বসবাসের জন্য ১৯৬৭ সালের সীমানার ভিত্তিতে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে সমর্থন করে বলা হয়েছে যে, যেকোনো দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের জন্য জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ অপরিহার্য।

আন্তর্জাতিক আইনি পদক্ষেপের ওপর গুরুত্বারোপ

নিউইয়র্ক ঘোষণার সঙ্গে সংযুক্ত একটি দলিলে আন্তর্জাতিক আইনি সংস্থাগুলোর সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) তদন্তে সমর্থন দেওয়ার জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা গণহত্যা মামলায় যোগ দিতে দেশগুলোকে উৎসাহিত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, গাজায় চালানো যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে একটি গণহত্যা মামলারও মুখোমুখি হয়েছে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.