নাহিদ ইসলাম: জাতীয় সরকারের প্রস্তাব তারেক রহমান প্রত্যাখ্যান করেছিলেন

গত বছরের আগস্টে উত্তাল সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দেওয়া জাতীয় সরকার ও নতুন সংবিধানের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। সে সময় তিনি নাগরিক সমাজের সদস্যদের নিয়ে একটি নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পাল্টা পরামর্শ দেন। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক ও ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বৃহস্পতিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে এই বিস্ফোরক দাবি করেছেন।

নাহিদ ইসলামের এই বক্তব্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক এক মন্তব্যের সরাসরি বিরোধী। মির্জা ফখরুল দাবি করেছিলেন, ছাত্রদের পক্ষ থেকে তাদের কাছে জাতীয় সরকারের কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। এই বক্তব্যকে ‘সত্য নয়’ বলে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, ‘৫ অগাস্ট রাতের প্রেস ব্রিফিং এ আমরা বলেছিলাম আমরা অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার করতে চাই। সেই প্রেস ব্রিফিংয়ের পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের সঙ্গে আমাদের ভার্চুয়াল মিটিং হয়... তারেক রহমান এ প্রস্তাবে সম্মত হননি।’

নাহিদ আরও জানান, তারেক রহমানের পরামর্শের পরই তারা প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করেন। এমনকি উপদেষ্টা পরিষদ শপথ নেওয়ার আগেও তারেক রহমানের সঙ্গে আরেকটি বৈঠকে প্রস্তাবিত সদস্যদের নিয়ে আলোচনা হয়েছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ফেসবুক পোস্টে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সম্পর্ক এবং আন্দোলনে তাদের ভূমিকা নিয়েও মুখ খুলেছেন নাহিদ ইসলাম। সম্প্রতি একটি টকশোতে শিবির নেতা সাদিক কায়েমের দেওয়া বক্তব্যকে ‘মিথ্যাচার’ আখ্যা দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘(সাদিক কায়েম বলেছেন) ছাত্রশক্তির গঠনপ্রক্রিয়ায় শিবির যুক্ত ছিল, শিবিরের ইনস্ট্রাকশনে আমরা কাজ করতাম। এটা মিথ্যাচার।’

তিনি স্বীকার করেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে তারা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল। নাহিদের দাবি, সাদিক কায়েম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সমন্বয়ক না হয়েও ৫ আগস্ট থেকে সেই পরিচয় ব্যবহার করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘এই অভ্যুত্থান শিবিরের একক নয়, শিবিরের ইনস্ট্রাকশন বা ডিরেকশনও হয় নাই।’

আন্দোলনের সেই দিনগুলোতে একটি ‘আর্মি ক্যু’-এর আশঙ্কা ও চেষ্টার কথাও উল্লেখ করেছেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভেতর প্রথম থেকে এটা স্পষ্ট ছিল যে ক্ষমতা কোনোভাবে সেনাবাহিনী বা সেনাবাহিনী সমর্থিত কোনো গ্রুপের কাছে দেওয়া যাবে না। এতে আরেকটা এক-এগারো হবে এবং আওয়ামী লীগ ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হবে।’ তার মতে, এটিকে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থান হিসেবে সফল করাই তাদের মূল লক্ষ্য ছিল।

সবশেষে, বর্তমান সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ‘পাল্টা নেতৃত্ব’ তৈরির উদ্দেশ্যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন নাহিদ। তিনি লিখেছেন, ‘কল রেকর্ড ফাঁস, সার্ভাইলেন্স, চরিত্রহনন, অপপ্রচার, প্রোপাগান্ডা হেন কোনো কাজ নাই হচ্ছে না... কিন্তু মিথ্যার ওপর দিয়ে বেশিদিন টিকা যায় না। এরাও টিকবে না।’