২০২৪ সালের ১ আগস্ট: ডিবির হেফাজত থেকে ৬ ছাত্রনেতার মুক্তি

২০২৪ সালের ১ আগস্ট, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশব্যাপী ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালন করে, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত, আহত, গুম ও গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের স্মরণ করা। তবে ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পুলিশি বাধা, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও গ্রেপ্তারের সম্মুখীন হয়। ঘটনাবহুল এই দিনে একদিকে যেমন আন্দোলনের ছয় শীর্ষ সমন্বয়ককে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মুক্তি দেয়, তেমনই সরকার কর্তৃক জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

স্মরণ কর্মসূচিতে বাধা, সমাবেশে শিক্ষক-আইনজীবী-সাধারণ মানুষ

১ আগস্ট সকাল থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল, সিলেট, শেকৃবি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচিতে অংশ নেয় হাজারো শিক্ষার্থী। কোথাও কোথাও শিক্ষকদের উপস্থিতিও দেখা গেছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল স্মৃতিচারণ, চিত্রাঙ্কন, ফেস্টুন ও দেয়ালচিত্র নির্মাণ এবং আলোচনা সভা।

তবে একাধিক স্থানে পুলিশ বাধা দেয় এবং কিছু জায়গায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। কোথাও শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনার থেকে মিছিল বের করেন। অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

ডিবির হেফাজত থেকে মুক্তি ৬ ছাত্রনেতার

দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর আন্দোলনের ছয় শীর্ষ সমন্বয়ককে ১ আগস্ট দুপুরে মুক্তি দেওয়া হয়। তারা হলেন—নাহিদ ইসলাম, আব্দুল কাদের, রিফাত রশিদসহ আরও তিনজন।

ডিবির নিজস্ব পরিবহনে তাদের নিজ নিজ বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

নাহিদ ইসলামের বাবা জানান, সকাল ৬টায় পরিবারকে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয়। আন্দোলনকারীরা দুই দিন অনশন করায় তারা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন।

‘জুলাই গণহত্যা’ স্মরণে ২ আগস্ট ‘গণমিছিল ও প্রার্থনা’

১ আগস্ট রাতে আন্দোলন সমন্বয়ক আব্দুল কাদের সই করা এক বিবৃতিতে ২ আগস্ট)দেশব্যাপী ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এতে শহীদদের কবর জিয়ারত, মসজিদ-মন্দির-গির্জাসহ সব উপাসনালয়ে প্রার্থনা এবং জুমার নামাজ শেষে গণমিছিল আয়োজনের কথা বলা হয়। শ্রমিক, শিক্ষক, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ

১ আগস্ট দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক নির্বাহী আদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় এই দুই সংগঠনের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

দেশে-বিদেশে প্রতিবাদ, সহানুভূতি ও উদ্বেগ

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন। তারা শিক্ষার্থী হত্যার বিচার দাবি করেন এবং রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধের আহ্বান জানান।

জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক বিবৃতিতে জানান, সহিংসতার নিরপেক্ষ তদন্তে জাতিসংঘ বাংলাদেশ সরকারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিশন ১৬-২১ জুলাইয়ের মধ্যে সংঘটিত সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, নাশকতা ও প্রাণহানির তদন্ত করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্নমত ও প্রতিক্রিয়া

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘নীলদল’ এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের দাবির অনেকাংশ পূরণ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ‘আন্দোলন থামানোর’ আহ্বান জানায়।

বিপরীতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শহীদ আবু সাঈদসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।