আপনি পড়ছেন

একদিকে ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কের বোঝা চাপিয়ে ‘রাশিয়া পেনাল্টি’ আরোপ, অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে বিশাল জ্বালানি চুক্তির ঘোষণা—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই দ্বিমুখী নীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণ দ্রুত বদলে যাচ্ছে। বুধবার নিজের ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে ট্রাম্পের করা একটি মন্তব্য ভারতের অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছে, যেখানে তিনি লিখেছেন, ‘কে জানে, একদিন হয়তো দেখা যাবে এই পাকিস্তান ভারতেও তেল বিক্রি করছে!’

ভারত ও পকিস্তানের পতাকা

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ইসলামাবাদের প্রতি ওয়াশিংটনের এই আকস্মিক অনুরাগ দিল্লির জন্য বড় ধরনের কৌশলগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। অথচ ২০১৮ সালে এই ট্রাম্পই বলেছিলেন, পাকিস্তান ‘মিথ্যে আর ধোঁকা’ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রকে কিছুই দেয়নি। সেই অবস্থান থেকে সরে এসে তিনি এখন কেবল পাকিস্তানের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছেন না, দিল্লিকে খোঁচা দেওয়ার কোনো সুযোগও হাতছাড়া করছেন না।

সামরিক সম্পর্ক জোরদারে ইসলামাবাদের তৎপরতা

সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। মাত্র কয়েক দিন আগেই মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের (ইউএসসেন্টকম) প্রধান জেনারেল মাইকেল কুরিলাকে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মাননাগুলোর অন্যতম ‘নিশান-ই-ইমতিয়াজ’-এ ভূষিত করা হয়। প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি নিজে এই খেতাব তুলে দেন। এর আগে জেনারেল কুরিলা সন্ত্রাসবাদ দমনে পাকিস্তানকে ‘অসাধারণ সহযোগী’ বলে প্রশংসা করেছিলেন।

এর রেশ না কাটতেই জুলাই মাসের শুরুতে পাকিস্তানের বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল জাহির আহমেদ বাবর সিধু ওয়াশিংটন সফর করেন। পেন্টাগন থেকে শুরু করে স্টেট ডিপার্টমেন্টে তার ধারাবাহিক বৈঠক স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, পাকিস্তান মার্কিন সমরাস্ত্র, বিশেষ করে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান এবং হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম কেনার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে চাইছে।

এই সামরিক বোঝাপড়ার ভিত্তি আরও মজবুত হয়েছিল মাস দেড়েক আগে, যখন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজে আপ্যায়ন করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যদিও সেই বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য অপ্রকাশিত, হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে ট্রাম্পের ভূমিকার জন্য পাকিস্তান তাকে নোবেল পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করার পরই এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

কেন পাকিস্তানের প্রতি ঝুঁকছেন ট্রাম্প?

ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ট্রাম্পের এই নীতি বদলের পেছনে দুটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করেছেন। প্রথমত, পাকিস্তান মার্কিন প্রেসিডেন্টের পরিবারের মালিকানাধীন একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রতিষ্ঠান, ‘ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফিনান্সিয়াল’-এর সঙ্গে রাষ্ট্রীয়ভাবে অংশীদারিত্বে সম্মত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ভারত-পাকিস্তান সংঘাত থামাতে তার ভূমিকার জন্য পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পের নাম প্রস্তাব করেছে, যা তার মনস্তত্ত্বে বড় প্রভাব ফেলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত মে মাসে ‘অপারেশন সিঁদুর’ কেন্দ্রিক উত্তেজনার পর যখন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, ট্রাম্প দাবি করেন যে তার মধ্যস্থতাতেই এটি সম্ভব হয়েছে। পাকিস্তান তাৎক্ষণিকভাবে এই দাবিকে সমর্থন জানালেও ভারত শুরু থেকেই কোনো তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা অস্বীকার করে আসছে। ভারতের এই অবস্থান ট্রাম্পকে যে অসন্তুষ্ট করেছে, তা তার সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোতে স্পষ্ট।

ভারতের জন্য দ্বিমুখী বিপদ

একসময় ‘কোয়াড’ জোটের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে ভারত ছিল আমেরিকার প্রধান কৌশলগত মিত্র। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবেলা করা। কিন্তু ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এসে সেই সমীকরণে পরিবর্তন ঘটছে। সাবেক ভারতীয় কূটনীতিবিদ কে সি সিং-এর মতে, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প অন্য ধাতুর মানুষ। তিনি চীনের সঙ্গে সরাসরি বোঝাপড়া করতে চান, যেখানে ভারতের ভূমিকা গৌণ।’

ফলে, একদিকে ২৫ শতাংশ হারে চাপানো শুল্ক এবং অতিরিক্ত জরিমানা ভারতের অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সঙ্গে আমেরিকার এই ক্রমবর্ধমান সামরিক ও অর্থনৈতিক ঘনিষ্ঠতা ভারতের জন্য একটি গম্ভীর কৌশলগত ও সামরিক বিপদ সংকেত বয়ে আনছে। ওয়াশিংটনের এই নীতি পরিবর্তন দিল্লির নীতিনির্ধারকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।

বিবিসি অবলম্বনে

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.