স্বাস্থ্যখাতে কাঠামোগত পরিবর্তনে প্রধান উপদেষ্টাকে ৩ দফা প্রস্তাব

দেশের স্বাস্থ্যখাতের অর্জনগুলো কাঠামোগত দুর্বলতা ও প্রশাসনিক ফাঁকফোকরের কারণে ঝুঁকির মুখে পড়েছে বলে সতর্ক করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এই সংকট থেকে উত্তরণে তারা স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের মূল সুপারিশগুলো অবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে একটি খোলা চিঠির মাধ্যমে জোর দাবি জানিয়েছেন। তাদের প্রধান প্রস্তাব হলো, এই সংস্কার কার্যক্রমকে ‘জুলাই সনদ ২০২৫’-এ অন্তর্ভুক্ত করে এর বাস্তবায়নে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা।

শুক্রবার (১ আগস্ট) পাঠানো ওই চিঠিতে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন, স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো নিছক সেবা সম্প্রসারণের প্রস্তাব নয়, বরং এটি স্বাস্থ্যখাতের শাসন ব্যবস্থায় কাঠামোগত পরিবর্তনের এক কৌশলগত রূপরেখা।

তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সময়োপযোগী বাস্তবায়ন না হলে এসব গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ কেবল ‘কাগুজে নীতি’ হিসেবেই থেকে যাবে এবং বাস্তবে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

এই পরিস্থিতি এড়াতে এবং একটি টেকসই ও গণমুখী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিশেষজ্ঞরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতার মধ্যেই শুরু করা যায় এমন তিনটি জরুরি পদক্ষেপের প্রস্তাব দিয়েছেন।

প্রথমত, স্বাধীন, জবাবদিহিমূলক ও কৌশলগত দিক-নির্দেশনা প্রদানে সক্ষম একটি ‘স্থায়ী স্বাস্থ্য কমিশন’ গঠনের জন্য অবিলম্বে প্রশাসনিক ও আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা। দ্বিতীয়ত, শহর ও গ্রাম উভয় এলাকায় বাধ্যতামূলক রেফারেল ব্যবস্থাসহ ‘সর্বজনীন বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা’ চালুর উদ্যোগ গ্রহণ। এবং তৃতীয়ত, সংস্কার কার্যক্রমের বাস্তবায়ন ও তদারকির জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অধীনে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্যোগগুলো কোনোভাবেই দীর্ঘসূত্রতার বিষয় নয়। তারা একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ পেশ করে বলেছেন, চলতি আগস্ট মাসের মধ্যেই সংস্কার কাজ শুরু করা সম্ভব হলে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সরকার প্রয়োজনীয় অধ্যাদেশ জারি করতে পারবে। এর ফলে ২০২৬ সালের প্রথম প্রান্তিকে এসেই দেশের মানুষ স্বাস্থ্যখাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখতে পাবে।

এই প্রস্তাবকে নিছক প্রশাসনিক উদ্যোগ হিসেবে না দেখে এর পেছনে একটি ‘নৈতিক দায়বদ্ধতা’ রয়েছে বলেও মনে করিয়ে দেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, ‘আগস্টে এই সংস্কার উদ্যোগ শুরু হলে তা হবে গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি জাতির শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধা নিবেদন এবং ভবিষ্যতের পথে এক সাহসী পদক্ষেপ।’

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ছিলেন স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন, কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ সাপোর্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন, পথিকৃৎ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী, অধ্যাপক নায়লা জামান খান, ডা. আযহারুল ইসলাম খান এবং অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্মস বাংলাদেশ-এর আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আব্দুল হামিদ। তারা আশা প্রকাশ করেন, প্রধান উপদেষ্টা সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্যখাতে একটি গঠনমূলক পরিবর্তনের ভীত স্থাপন করবেন।