শেখ হাসিনার মামলায় প্রথম সাক্ষী: ‘আমার সব শেষ, বিচার চাই’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আজ রোববার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথম দিনেই আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন নারায়নগঞ্জের গুলিবিদ্ধ খোকন চন্দ্র বর্মন। একপর্যায়ে নিজের মাস্ক খুলে বিকৃত হয়ে যাওয়া মুখমণ্ডল প্রদর্শন করে তিনি বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে। মাননীয় আদালত, আমার এই অবস্থা এবং আমাদের ভাইদের হত্যার আমি বিচার চাই।’

বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ এই সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। খোকন চন্দ্র বর্মন ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ঘটে যাওয়া সহিংস ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি আদালতকে জানান, সেদিন যাত্রাবাড়ী থানা থেকে পুলিশ বেরিয়ে ‘পাখির মতো ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায়’। একপর্যায়ে পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে গুলি করলে তিনি হাতে ও পায়ে গুলিবিদ্ধ হন।

আদালতে দেওয়া ভাষ্যে খোকন বলেন, ‘আমি ফ্লাইওভারের নিচে থাকা কিছু ড্রামের আড়ালে আশ্রয় নিই। কিন্তু পুলিশ কাছে এসে আমার মাথা লক্ষ্য করে গুলি করে। গুলিটি আমার মুখে লাগে।’ এই ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার পর তিনি মুগদা মেডিকেল, ঢাকা মেডিকেল ও মিরপুরের ডেন্টাল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরবর্তীতে বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে এক মাস থাকার পর সরকারের সহায়তায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাশিয়া পাঠানো হয়। খোকন জানান, আগামী ১২ আগস্ট তার পরবর্তী অপারেশনের জন্য আবারও রাশিয়া যাওয়ার কথা রয়েছে।

আজকের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয় চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। এরপরই প্রথম সাক্ষী হিসেবে খোকন চন্দ্র বর্মনকে উপস্থাপন করা হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আজকের দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক’ উল্লেখ করে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ন্যায়বিচার দাবি করেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন খোকনকে জেরা করেন। মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামীকাল দিন ধার্য করা হয়েছে।

এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এই মামলায় রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। পলাতক থাকায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে জুলাই-আগস্টের সহিংস ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এটিই প্রথম মামলা, যেখানে শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া গুম-খুন এবং মতিঝিলের শাপলা চত্বরের ঘটনায় দায়ের হওয়া আরও দুটি মামলাতেও তিনি অভিযুক্ত।