সরকার বদলেছে, চর্চা নয়: অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর নিয়ে টিআইবির উদ্বেগ

কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের এক বছর পূর্ণ হলেও তথ্য ও মানবাধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ দুটি কমিশন গঠনে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতাকে ‘বিশ্ব রেকর্ড’ বলে অভিহিত করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির মতে, এই ব্যর্থতা প্রমাণ করে যে, দেশে কেবল সরকারের পতন ঘটলেও কর্তৃত্ববাদী চর্চার অবসান ঘটানোর সদিচ্ছা এখনো অনুপস্থিত।

সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ‘কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী এক বছর: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এক বছর পার হয়ে গেছে, অথচ এখনো তথ্য ও মানবাধিকার কমিশন গঠিত হয়নি। এসব আইন সংস্কার তো দূরের কথা, এই দুটি কমিশন এখন পর্যন্ত নেই।’ তিনি অবিলম্বে কমিশন দুটি গঠনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।

টিআইবির গবেষণায় উঠে এসেছে, নাগরিক অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতে যে ধরনের আইনি সংস্কার জরুরি ছিল, তা বাস্তবায়নে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। বিশেষ করে, নতুন সাইবার সুরক্ষা আইনের কিছু বিতর্কিত ধারা এবং বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইনের ১৪ নম্বর ধারাকে বেসরকারি সংস্থাগুলোর জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ড. ইফতেখারুজ্জামানের মতে, এসব আইন সংস্কারে ব্যর্থতা আসলে পুরোনো কর্তৃত্ববাদী মানসিকতাকেই টিকিয়ে রাখার নামান্তর।

রাজনৈতিক সংস্কৃতির অধঃপতন নিয়েও তীব্র সমালোচনা করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট–পরবর্তী রাজনৈতিক যাত্রা অশুভ ছিল। ওই দিন বিকেল থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের একাংশ দলবাজি, চাঁদাবাজি এবং মামলা-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ে, যা গত এক বছরে আরও বেড়েছে।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, নতুন রাজনৈতিক দলগুলোও জন্মলগ্ন থেকে এই একই নেতিবাচক মডেল অনুসরণ করছে, যা দেশের রাজনীতির জন্য এক অশনিসংকেত। অথচ, অন্যান্য সংস্কার নিয়ে আলোচনা হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংস্কারের বিষয়টি বরাবরই উপেক্ষিত থাকছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলো মতপার্থক্য সত্ত্বেও যেসব সংস্কারে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল, সেগুলোর সাংবিধানিক ও আইনি বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। এই অনিশ্চয়তা সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং রাজনৈতিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করার ঝুঁকি তৈরি করছে।

টিআইবির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাহজাদা এম আকরাম ও মো. জুলকারনাইন গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান ও উপদেষ্টা সুমাইয়া খায়ের। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।