খাদের কিনারা থেকে ফিরছে আর্থিক খাত, আইসিইউ থেকে কেবিনে!

দেশের আর্থিক খাতকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলে স্থিতিশীলতার পথে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, এই পরিবর্তন রাতারাতি সম্ভব নয়; পুরোপুরি পুনরুদ্ধারের জন্য দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তার মতে, অর্থনীতি এখন ‘আইসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তরিত হয়েছে’।

সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ‘জুলাই অভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।

আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি টেকসই পথ তৈরি করতে ‘নতুন ব্যাংক কোম্পানি আইন’ প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, আইনের খসড়া ইতিমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই আইন পাস হলে ব্যাংকিং খাত একটি নির্ধারিত ট্র্যাকে ফিরবে এবং ‘ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না’ বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। গভর্নরের মূল লক্ষ্য, মূল্যস্ফীতিকে বর্তমান ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং যে কোনো মূল্যে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা।

ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান, প্রক্রিয়া ও ব্যক্তি পর্যায়ে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা গভীরভাবে প্রোথিত। তবে কিছু সৎ ও দক্ষ মানুষ আছেন, তাদের মাধ্যমেই আমরা সংস্কারের চেষ্টা করছি।’ তিনি আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি পথচিহ্ন তৈরি করে দিয়ে যাবে, যার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সরকার অর্থনীতিকে পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করতে পারবে।

অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে তাদের পরিবারের প্রতি সম্মাননা জানানো হয়। গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘জুলাই শহীদদের ত্যাগ আমরা ভুলব না। ৫ আগস্টের আকাঙ্ক্ষা আর্থিক খাতে বাস্তবায়ন করব।’ এই লক্ষ্যে গেজেটভুক্ত ৮৫২টি শহীদ পরিবারের প্রত্যেককে ২ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অন্যান্য তফসিলি ব্যাংকগুলো যৌথভাবে শহীদ ও আহত প্রায় ১৬ হাজার পরিবারকে এই সহায়তা পৌঁছে দেবে।

তবে ব্যাংকিং খাত এখনও পুরোপুরি সংকটমুক্ত নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সাবেক ব্যাংকার মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংক এখনও পুরোপুরি ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি। যারা ফ্যাসিবাদের সহযোগী ছিল, তাদের শাস্তি দিতে হবে।’ একই সুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আমলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তা দুর্নীতিতে যুক্ত ছিলেন, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ছাত্র আন্দোলনের প্রশংসা করে বলেন, ‘ছাত্রদের সাথে জনগণ যুক্ত হলে কোনো সরকার টিকে থাকতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না।’ তবে এবারের আন্দোলনে বুদ্ধিজীবীদের অনুপস্থিতি নিয়ে তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘তাঁরা বিক্রি হয়ে গিয়েছিলেন।’