প্রথমবারের মতো জাহাজে চেপে দুবাই গেল বাংলাদেশের কাঁঠাল

আকাশপথের একচেটিয়া আধিপত্য ভেঙে এই প্রথম সমুদ্রপথে বিদেশে রপ্তানি হলো বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। গত মে মাসে ঢাকাভিত্তিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘ইউনিভার্স স্টাইল’ সাড়ে তিন হাজার কেজি কাঁঠাল দুবাইতে পাঠিয়ে এই নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো, আকাশপথের তুলনায় প্রায় ১২ গুণ কম খরচে এই রপ্তানি সম্ভব হয়েছে, যা দেশের ফল রপ্তানিতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

আকাশপথে যেখানে এক কেজি ফল পাঠাতে প্রায় ১৬০ টাকা খরচ হয়, সেখানে সমুদ্রপথে খরচ নেমে আসে মাত্র ১৩ থেকে ১৪ টাকায়। ইউনিভার্স স্টাইলের পাঠানো চালানটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে দুবাইয়ের জেবল আলী বন্দরে পৌঁছাতে প্রত্যাশিত ১২ দিনের বদলে ২৬ দিন সময় নেয়। দীর্ঘ এই যাত্রার পরেও কাঁঠালের মান প্রায় অক্ষুণ্ণ থাকায় রপ্তানিকারকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ তৈরি হয়েছে।

ইউনিভার্স স্টাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুজ্জামান মানিক বলেন, ‘দীর্ঘ সময় লাগার পরেও প্রায় ৩৫ শতাংশ কাঁঠালের গায়ের রঙ স্বাভাবিক ছিল এবং বাকিগুলোরও ভেতরের অংশ সম্পূর্ণ ঠিক ছিল। এই সাফল্য আমাদের আত্মবিশ্বাসী করেছে। এখন থেকে আমরা কাঁঠাল, আনারসসহ অন্যান্য দেশি ফলও সমুদ্রপথে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ আনারস রপ্তানির সুবিধার্থে টাঙ্গাইলে একটি ওয়্যারহাউস তৈরির পরিকল্পনাও করছেন বলে জানান তিনি।

এতদিন ফল পচে যাওয়ার আশঙ্কায় রপ্তানিকারকরা আকাশপথের ওপরই নির্ভরশীল ছিলেন। ঢাকার আরেক ফল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স গ্রিন ট্রেড হোমের স্বত্বাধিকারী আলাউদ্দিন বলেন, ‘সময় বেশি লাগার ভয়ে আমরা সমুদ্রেপথে ফল পাঠাতে পারতাম না। এখন যেহেতু একটি সফল উদাহরণ তৈরি হয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি শিপিং লাইনের মতো সুবিধাগুলো নিশ্চিত করা গেলে ফল রপ্তানিতে সত্যিই নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংঘনিরোধ উইংয়ের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে মোট ২ হাজার ২৪ মেট্রিক টন কাঁঠাল রপ্তানি হয়েছিল। চলতি মৌসুমের এ পর্যন্ত রপ্তানি হওয়া ১ হাজার ৫৩১ টন কাঁঠালের প্রায় পুরোটাই গেছে আকাশপথে। এর মধ্যে সমুদ্রপথে পাঠানো সাড়ে তিন হাজার কেজি কাঁঠাল একটি পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ হলেও এর সাফল্য পুরো চিত্র বদলে দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক মো. শাহ আলম নিশ্চিত করেছেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কাঁঠাল রপ্তানির ঘটনা এটিই প্রথম। মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইডেন ও আয়ারল্যান্ডের মতো দেশে বাংলাদেশের কাঁঠালের চাহিদা রয়েছে। সমুদ্রপথের এই দ্বার উন্মুক্ত হওয়ায় স্বল্প খরচে এসব বাজারে আরও বড় পরিসরে বাংলাদেশি ফলের উপস্থিতি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।