‘ঝুঁকি নিয়ে নির্বাচনে কেন যাব?’ – সরকারের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের প্রশ্ন

নির্বাচনের কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ এখনো তৈরি না হওয়ায় এবং প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটি বলছে, প্রশাসন যথাযথভাবে কাজ না করায় এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে তাদের পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেওয়া কঠিন হবে।

বুধবার রাজধানীর পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম এই অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশাসন যথাযথ ফাংশন করছে না এবং বর্তমান সরকার প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সেখানে এই অবস্থায় নির্বাচন করতে গেলে প্রার্থীদের নিরাপত্তার ঝুঁকি থেকে যায়, এই ঝুঁকিতে কেন নির্বাচনে যাব, সেই প্রশ্ন আপনাদের কাছে রাখলাম।’

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ও প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে অসন্তোষ

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ এবং প্রধান উপদেষ্টার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণ নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে দলটি। মুফতি রেজাউল করিম বলেন, এত গুরুত্বপূর্ণ একটি দলিল তৈরির আগে তাদের মতামত না নিয়ে কেবল উপস্থিত রেখে সমর্থন আদায় করার চেষ্টা করা হয়েছে, যা ছিল ‘বিব্রতকর’।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ঘোষণাপত্রটিতে ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার প্রথম সংগ্রাম, শাপলা চত্বরের ঘটনা, পিলখানা হত্যাকাণ্ড এবং আলেম-ওলামাদের ওপর নির্যাতনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক অধ্যায় বাদ পড়েছে। তার মতে, এতে ফ্যাসিবাদের দোসরদের উপেক্ষা করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে তাদের পুনর্বাসনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে ‘আবেগময় ও সুলিখিত’ আখ্যা দিলেও এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি বা পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের মতো বাস্তব সমস্যা সমাধানের কোনো স্পষ্ট বার্তা ছিল না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ও জোটের রাজনীতি

আসন্ন নির্বাচন সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে আয়োজনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, এই পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচনে কালোটাকার দৌরাত্ম্য কমবে এবং সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হবে। তবে বিএনপি এককভাবে ক্ষমতায় যেতে চায় বলেই পিআর পদ্ধতি নিয়ে ‘শিষ্টাচারবহির্ভূত’ কথা বলছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ভবিষ্যতে জোট গঠনের সম্ভাবনাও খোলা রেখেছে দলটি। মুফতি রেজাউল করিম জানান, ইসলাম ও দেশপ্রেমী যেকোনো দলের সঙ্গে তাদের নির্বাচনী জোট বা সমঝোতা হওয়ার ‘খুবই সম্ভাবনা রয়েছে’। এই প্রসঙ্গে তিনি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও জোটের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন।

দলটি আরও দাবি করে, ‘জুলাই সনদ’কে অধ্যাদেশ বা গণভোটের মাধ্যমে আইনি ভিত্তি দিয়ে সেই আলোকেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। পরবর্তী সরকারের ওপর এই দায়িত্ব ছেড়ে দিলে পুরো প্রক্রিয়াটি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে তারা মনে করে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করিম, মহাসচিব ইউনূস আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন।