ম্যালেরিয়া নির্মূলে যুগান্তকারী সাফল্য, মশার দেহেই সংক্রমণ ঠেকাবে নতুন টিকা

অস্ট্রেলীয় গবেষকেরা ম্যালেরিয়ার পরজীবীর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন যৌগের গঠন প্রথমবারের মতো উন্মোচন করেছেন। এই সাফল্য রোগটির বিস্তার রোধে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে এমন নতুন প্রজন্মের টিকা তৈরির পথ খুলে দিয়েছে। উল্লেখ্য, ম্যালেরিয়া বিশ্বের অন্যতম প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগ। প্রতি বছর এ রোগে ছয় লাখের বেশি মানুষ মারা যান।

মেলবোর্ন-ভিত্তিক ওয়াল্টার অ্যান্ড এলিজা হল ইনস্টিটিউটের (ডব্লিউইএইচআই) নেতৃত্বে একদল গবেষক বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, তারা অত্যাধুনিক ‘ক্রায়ো-ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপি’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই সাফল্য পেয়েছেন। এর মাধ্যমে তারা মশার দেহে ম্যালেরিয়ার পরজীবীর প্রজননের জন্য অপরিহার্য একটি প্রোটিন জোটের নিখুঁত গঠনচিত্র তৈরি করতে পেরেছেন। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সায়েন্স’-এ এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে।

এই আবিষ্কারের ওপর ভিত্তি করে গবেষকেরা একটি সম্ভাবনাময় এমআরএনএ টিকা তৈরি করেছেন। টিকাটির মূল লক্ষ্য হলো, মশার দেহেই ম্যালেরিয়ার পরজীবীর বংশবিস্তার রোধ করা। এর ফলে, জীবাণুটি মানবদেহে সংক্রমণের সুযোগ পাওয়ার আগেই তার জীবনচক্র ভেঙে দেওয়া সম্ভব হবে।

প্রাক-চিকিৎসাপর্বের পরীক্ষায় টিকাটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ফল দেখিয়েছে। গবেষকদের ভাষ্যমতে, টিকাটি প্রয়োগের পর দেহে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা মশার শরীরে পরজীবীর সংক্রমণ ৯৯.৭ শতাংশ পর্যন্ত ঠেকাতে সক্ষম।

টিকাটির সহ-উদ্ভাবক এবং মোনাশ ইনস্টিটিউট অব ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সেসের গবেষক কলিন পাউটন বলেন, ‘ম্যালেরিয়ার টিকার এই সাফল্য এমআরএনএ প্রযুক্তির বহুমুখিতাকেই তুলে ধরে। কোভিড টিকার বাইরেও এই প্রযুক্তির আরও বহুবিধ প্রয়োগ রয়েছে।’

গবেষক দলের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো, মানবদেহের রক্ত ও যকৃতে থাকা পরজীবীকে প্রতিরোধকারী অন্যান্য টিকার সঙ্গে এই নতুন সংক্রমণরোধী এমআরএনএ টিকাটিকে একীভূত করা। এর মাধ্যমে একটি সমন্বিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে, যা ম্যালেরিয়ার প্রকোপ কমিয়ে রোগটি নির্মূলের পথকে আরও প্রশস্ত করবে।