প্রশাসনে পদোন্নতির নতুন ঢেউ: উপসচিব, যুগ্ম ও অতিরিক্ত সচিব পদে আসছে বড় পরিবর্তন

প্রশাসনে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে তিন স্তরের পদোন্নতির প্রক্রিয়া আবারও গতি পেয়েছে। উপসচিব, যুগ্ম সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব পদে এই পদোন্নতি কার্যকর করতে জোর প্রস্তুতি শুরু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম ধাপে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে, যা সেপ্টেম্বরের মধ্যে অতিরিক্ত ও যুগ্ম সচিব পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।

এই বিশাল কর্মযজ্ঞের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি), যা পদোন্নতিযোগ্য আট শতাধিক কর্মকর্তার কর্মজীবনের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাইয়ের কাজ প্রায় গুছিয়ে এনেছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদের নেতৃত্বে এসএসবি আগামীকাল শনিবার পুনরায় বৈঠকে বসবে। সেখানে কর্মকর্তাদের চাকরির শৃঙ্খলা, দুর্নীতির রেকর্ড এবং সার্বিক কর্মদক্ষতা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করা হবে। এসএসবি চূড়ান্ত তালিকা তৈরির পর তা অনুমোদনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠাবে।

পদোন্নতির এই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপে রয়েছেন বিসিএস ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তারা, যারা সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব হবেন। এই ব্যাচের কর্মকর্তারা ২০২২ সালের ৩ জুন পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করলেও নানা কারণে তা আটকে ছিল। প্রশাসন ক্যাডারের ৩১৯ জন এবং অন্যান্য ক্যাডার থেকে আবেদন করা ২২৩ কর্মকর্তার মধ্য থেকে প্রায় আড়াই শ জনকে উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে।

এদিকে, সেপ্টেম্বরে যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য নিয়মিত হিসেবে বিসিএস ২০তম ব্যাচকে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন এবং অন্যান্য ক্যাডার মিলিয়ে প্রায় ৩০০ কর্মকর্তাকে এ পদে পদোন্নতির জন্য ভাবা হলেও একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। পূর্ববর্তী সরকারের আমলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ৪৩ জন এবং মন্ত্রীদের একান্ত সচিব (পিএস) হিসেবে কাজ করা ৪০ কর্মকর্তাকে এবার বিবেচনায় রাখা হচ্ছে না।

একই সঙ্গে, যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে অতীতে ‘বঞ্চিত’ বিসিএস ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। গত মার্চে পদোন্নতির তালিকা থেকে বাদ পড়া ১৮২ জন কর্মকর্তার আবেদন পর্যালোচনার পর সেপ্টেম্বরের শেষে তাদের মধ্য থেকে ১০০ থেকে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রশাসনের তিন স্তরের পদোন্নতির কাজ চলছে। চলতি মাসের মাঝের দিকে উপসচিব এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যে অতিরিক্ত ও যুগ্ম সচিবের পদোন্নতি দেওয়ার টার্গেট রয়েছে।’

তবে এই পদোন্নতির প্রক্রিয়ার সঙ্গে একটি বড় চ্যালেঞ্জও জড়িত। জনপ্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি স্তরেই অনুমোদিত পদের চেয়ে কর্মরত কর্মকর্তার সংখ্যা অনেক বেশি। বর্তমানে অতিরিক্ত সচিবের ২১২টি পদের বিপরীতে ৩৫৮ জন এবং যুগ্ম সচিবের ৫০২টি পদের বিপরীতে এক হাজার ২৮ জন কর্মকর্তা কর্মরত আছেন। ফলে নতুন করে পদোন্নতি পেলেও অধিকাংশ কর্মকর্তাকেই আগের পদে থেকেই (ইন-সিটু) দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে।