রাষ্ট্রীয় সংস্কারের রূপরেখা ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখনই ঘনিয়ে এসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা। আগামী ১৫ই আগস্ট কমিশনের ছয় মাসের মেয়াদ শেষ হতে চললেও সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপির মতো দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য দেখা দেওয়ায় পুরো প্রক্রিয়াটিই এখন গভীর অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

ছবি - সংগৃহীত

মূল সংকট বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে

এই অচলাবস্থার মূলে রয়েছে সংস্কার প্রস্তাবগুলো কখন এবং কীভাবে কার্যকর করা হবে, সেই প্রশ্ন। বিএনপির অবস্থান হলো, দলগুলো সনদে স্বাক্ষর করবে এবং নির্বাচিত হওয়ার পর নতুন সরকার আগামী দুই বছরের মধ্যে এগুলো বাস্তবায়ন করবে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের মতে, সাংবিধানিক সংশোধনী ছাড়া বাকি সংস্কারগুলো অধ্যাদেশ বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই বাস্তবায়ন করতে পারে। তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিক সংশোধনীগুলো বাস্তবায়নের বৈধ ফোরাম জাতীয় সংসদ।’

কিন্তু জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি এই প্রস্তাবে আস্থা রাখতে পারছে না। তাদের আশঙ্কা, নির্বাচনের পর কোনো সরকার এই সংস্কার বাস্তবায়নে আন্তরিক থাকবে না। তাই তারা চায়, নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদকে আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি দেওয়া হোক।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘যে সমস্ত বিষয়ে সবাই একমত, সেগুলো জাতির সামনে ঘোষণা করে হলেও দ্রুত সনদে স্বাক্ষর করিয়ে নির্বাচনের পূর্বেই এটিকে আইনি রূপ দিয়ে এর ভিত্তিতে নির্বাচনে যেতে হবে।’ একই সুরে এনসিপি'র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীবও জানান, ‘নির্বাচনের পূর্বে জুলাই সনদকে আইনি, সাংবিধানিক ভিত্তি দিয়ে ওই সনদ অনুযায়ী পরবর্তী নির্বাচন হতে হবে। এটি আমাদের প্রধান দাবি।’

ঐকমত্য না হলে কী হবে?

রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকায় প্রশ্ন উঠেছে, যদি ১৫ আগস্টের মধ্যে সনদ চূড়ান্ত না হয়, তাহলে কী ঘটবে? এনসিপি জানিয়েছে, উচ্চকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি এবং প্রধানমন্ত্রীর দলীয় পদে না থাকার মতো কিছু মৌলিক দাবিতে ছাড় না দিলে তারা সনদে স্বাক্ষর করবে না।

অন্যদিকে, জামায়াত নেতা মতিউর রহমান আকন্দ আরও কঠোর অবস্থান নিয়ে বলেন, কিছু বিষয়ে জাতীয় স্বার্থে সরকারকে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দিতে হবে এবং প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করতে হবে। তার মতে, ‘এই উদ্যোগ যদি সরকার না নেয়, তাহলে এটা সরকারের ব্যর্থতা।’

বিএনপি অবশ্য আলোচনার দরজা খোলা রেখেছে। সালাহউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, কমিশন চূড়ান্ত খসড়া পাঠালে এবং তা পূর্বের আলোচনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হলেই তারা স্বাক্ষর করবেন।

কমিশনের শেষ মুহূর্তের প্রচেষ্টা

মেয়াদ ফুরিয়ে এলেও জাতীয় ঐকমত্য কমিশন হাল ছাড়ছে না। কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে প্রথমে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এবং পরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফা বৈঠকে বসবে কমিশন। দু-একদিনের মধ্যেই দলগুলোর কাছে সনদের একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া পাঠানো হবে।

তিনি স্বীকার করেছেন, সব বিষয়ে শতভাগ ঐকমত্য হয়তো সম্ভব নয়। আলী রীয়াজের কথায়, ‘সনদে যে সমস্ত জায়গায় ঐকমত্য হওয়ার, তা হয়েছে। এরপর আর এটা নিয়ে নতুন কিছু করার আমরা চেষ্টা করছি না। যেগুলো নোট অব ডিসেন্ট আছে, ওগুলো নিয়েই সনদ হবে।’ তার মতে, কমিশন কেবল অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে পারে, বাস্তবায়নের পথ দলগুলোকেই খুঁজে নিতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ এই পরিস্থিতিকে বাংলাদেশের রাজনীতির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হিসেবেই দেখছেন। তার মতে, ‘বিএনপি ধরে নিয়েছে, তারা সরকার গঠন করবে। তাই, সরকারে গেলে তারা যে বাধাহীন ক্ষমতার চর্চা করবে, সেখানে অন্তরায় হতে পারে, এমন কিছু প্রস্তাবের ব্যাপারে তারা আপত্তি জানিয়েছে।’ তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাবে একটি দল ক্রমাগত বিরোধিতা করলে জনগণের কাছে ভুল বার্তা যেতে পারে, যা দলটির জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.