বন্দিদের মুক্তির দাবিতে ইসরায়েলে দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক

ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে একটি বন্দি বিনিময় চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ইসরায়েলি বন্দিদের পরিবার ও সেনাসদস্যরা রবিবার আগামী ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।

তেল আবিবে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবারগুলো জানিয়েছে, এই ধর্মঘট ‘সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও প্রধান প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলোকে অচল করে দেবে’। তারা সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এই ধর্মঘটে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। ‘বন্দি ও তাদের স্বজনদের দুর্ভোগকে উপেক্ষা করার’ জন্য তারা ইসরায়েলি সরকারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

বিরোধীদলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক বিবৃতিতে এই পরিকল্পিত ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি এই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেওয়ার পদক্ষেপকে ‘ন্যায্য ও জরুরি’ বলে অভিহিত করেন এবং পরিবারগুলোর কর্মকাণ্ডের জন্য চলমান সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দেন।

নেতানিয়াহুর গাজা উপত্যকা পুরোপুরি পুনঃদখল করার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিরোধী দল ও পরিবারগুলোর ক্রমবর্ধমান সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এই ঘোষণাটি এসেছে। বন্দিদের পরিবার ও সামরিক বাহিনী আশঙ্কা করছে যে, এই ধরনের পদক্ষেপ বন্দিদের জীবনকে আরও বিপন্ন করে তুলবে।

এ সম্পর্কিত আরেকটি ঘটনায়, শনিবার গভীর রাতে কয়েক ডজন ইসরায়েলি বিক্ষোভকারী ডানপন্থী টেলিভিশন চ্যানেল থার্টিন-এর সদর দপ্তরে ঢুকে পড়ে। সে সময় চ্যানেলটির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘বিগ ব্রাদার’-এর সরাসরি সম্প্রচার চলছিল। বিক্ষোভকারীরা হামাসের সঙ্গে বন্দি বিনিময়ের দাবিতে স্লোগান দেয়।

বিক্ষোভকারীদের পরনে থাকা জামায় লেখা ছিল ‘গাজা থেকে বেরিয়ে যাও’। তারা ‘জনগণ যুদ্ধবিরতি চায়’ এবং ‘ইসরায়েল গাজাকে অনাহারে রাখছে’-এর মতো স্লোগান দেয়। নিরাপত্তা কর্মী ও প্রযোজনা কর্মীরা হস্তক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।

এই বিক্ষোভের আয়োজক বামপন্থী ইসরায়েলি গোষ্ঠী ‘স্ট্যান্ডিং টুগেদার’ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কেবলমাত্র সমস্ত স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বন্ধ করে এবং সরকারকে তার পরিকল্পনা থেকে পিছু হটতে বাধ্য করার মাধ্যমেই যুদ্ধ শেষ হতে পারে, বন্দিরা ফিরে আসতে পারে এবং অনাহার বন্ধ হতে পারে’।

উল্লেখ্য, ইসরায়েল গত ২ মার্চ থেকে গাজার সমস্ত পারাপার পথ বন্ধ রেখেছে, যার ফলে সীমান্তে শত শত পণ্যবাহী যানের দীর্ঘ সারি থাকা সত্ত্বেও ত্রাণ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য যে পরিমাণ ত্রাণ প্রয়োজন, তার তুলনায় অতি সামান্য পরিমাণ সামগ্রী ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

গাজায় প্রাণঘাতী যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের সম্মুখীন হচ্ছে, যেখানে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ৬১,৪০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এই সামরিক অভিযানে সমগ্র উপত্যকাটি বিধ্বস্ত হয়েছে এবং দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।

গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, উপত্যকায় চালানো যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) গণহত্যার মামলার সম্মুখীন।