আল-জাজিরার সাংবাদিক হত্যায় আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা

গাজায় আল-জাজিরা আরবি সংবাদকর্মী আনাস আল-শরীফ ও তার সহকর্মীদের হত্যার বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) যৌথভাবে একটি মামলা দায়ের করেছে হিন্দ রাজাব ফাউন্ডেশন (এইচআরএফ) এবং ফিলিস্তিনি মানবাধিকার কেন্দ্র (পিসিএইচআর)। মঙ্গলবার প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

রবিবার ২৮ বছর বয়সী ওই সাংবাদিক আল-শিফা হাসপাতালের বাইরে চিত্রগ্রহণ করছিলেন। এ সময় একটি ক্ষেপণাস্ত্র সেই তাঁবুতে আঘাত হানে যেখানে তিনি ও অন্য সংবাদকর্মীরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। এতে চারজন আল-জাজিরা সাংবাদিক ও সাহাত মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে কর্মরত একজনসহ মোট সাতজন নিহত হন।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী পরে স্বীকার করে যে হামলাটি ইচ্ছাকৃত ছিল। তারা নিহতদের 'প্রেস জ্যাকেট পরা সন্ত্রাসী' বলে আখ্যায়িত করে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে দায়ের করা এই মামলায় প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ ইসরায়েলের জ্যেষ্ঠ সামরিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলায় আদালতকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির অনুরোধ জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য নেতানিয়াহুর পরোয়ানার পরিধি বাড়ানোর এবং ফিলিস্তিন তদন্তে ২২০ জনেরও বেশি সাংবাদিক হত্যার ঘটনা অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হয়েছে।

এইচআরএফ চেয়ারম্যান দিয়াব আবু জাহজাহ বলেন, "আনাস আল-শরীফের হত্যাকাণ্ড এতটাই নগ্ন, এতটাই অহংকারী এবং মানব জীবন, সত্য, আইনি শৃঙ্খলা ও মানবতার প্রতি এতটাই অবজ্ঞায় ভরা যে এটি নীরব থাকতে দেওয়া যায় না এবং যাবেও না।"

তারা উপস্থিত প্রমাণের ওপর জোর দিয়ে আইসিসিকে 'গভীর উদ্বেগের' বিবৃতি থেকে সরে এসে ন্যায়বিচারের দাবিতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান।

এছাড়া, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা পৃথক এক বিবৃতিতে আল-জাজিরার সাংবাদিকদের হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন।

তারা বলেন, ‘ইসরায়েল যখন গাজা শহর দখলের পরিকল্পনা ঘোষণা করছে, ঠিক তখনই চারজন সাংবাদিককে হত্যা করা কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়, বরং ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর নৃশংসতা বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচনকারীদের নীরব করার একটি সুচিন্তিত প্রচেষ্টা।’

‘এটা জঘন্য যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রথমে আনাস আল-শরীফকে হামাস বলে অপবাদ দিয়ে তার প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করার চেষ্টা করে এবং পরে বিশ্বকে সত্য বলার জন্য তাকে ও তার সহকর্মীদের হত্যা করে।’

তারা আরও বলেন, ‘এগুলো একটি অহংকারী সেনাবাহিনীর কাজ, যারা বিশ্বাস করে যে তারা যে ধরনের গুরুতর অপরাধই করুক না কেন, তারা শাস্তি থেকে মুক্ত।’ তারা এই দায়মুক্তির অবসানের আহ্বান জানান।

তারা উপসংহারে বলেন, ‘যেসব রাষ্ট্র ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে, তাদের এখন ইসরায়েল সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে যাতে হত্যাকাণ্ড, নৃশংসতা ও গণ-অনাহার বন্ধ হয়।’