গাজায় ইসরায়েলি সামরিক দখলদারিত্বকে ‘বিপর্যয়’ বলল ফ্রান্স

গাজায় ইসরায়েলি সরকারের সামরিক দখলদারিত্বের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তা একটি 'বিপর্যয়' এবং 'উত্তেজনা' সৃষ্টি করবে বলে সতর্ক করেছ ফ্রান্স। মঙ্গলবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি সরকারের সামরিক দখলদারিত্বের সাম্প্রতিক ঘোষণা, যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে তা একটি বিপর্যয় ও উত্তেজনা বৃদ্ধি করবে, যার প্রথম শিকার হবে ইসরায়েলি জিম্মি এবং গাজার বেসামরিক জনগণ।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ফ্রান্স একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা মিশন মোতায়েনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে, যার লক্ষ্য ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি উভয় পক্ষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও উল্লেখ করেছে, ‘গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ অবশ্যই ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে একটি ভবিষ্যত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অংশ হতে হবে। ফ্রান্স দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। এই যুদ্ধ এখনই একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শেষ হওয়া উচিত।’

অন্য এক বিবৃতিতে ফ্রান্স গাজা উপত্যকায় আল জাজিরার সাংবাদিকদের হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘গাজায় সাংবাদিকদের ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হওয়া নিয়ে ফ্রান্স গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২০০ জনেরও বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।’ মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলেছে যে সাংবাদিকদের ‘কখনোই লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়।’

ফ্রান্স ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের প্রতি আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের জন্য গাজা উপত্যকায় নিরাপদ ও অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে তারা ‘স্বাধীনভাবে’ এবং ‘নিরপেক্ষভাবে’ সংঘাতের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে পারেন।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত রবিবার গাজা সিটির পশ্চিমের আল-শিফা হাসপাতালের কাছে একটি সাংবাদিক তাঁবুতে ইসরায়েলি হামলায় আল জাজিরার সাংবাদিক আনাস আল-শরিফ এবং মোহাম্মদ করাইকিয়া নিহত হন। একই হামলায় আল জাজিরা নেটওয়ার্কের আরও তিনজন ক্যামেরাম্যান এবং একজন ফ্রিল্যান্স রিপোর্টার প্রাণ হারান।

অক্টোবর ২০২৩ সাল থেকে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং পুরো উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এই সামরিক অভিযানের ফলে অনাহারে মৃত্যু, রোগের বিস্তার এবং আবর্জনার স্তূপ একটি সাধারণ দৃশ্যে পরিণত হয়েছে।

গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইওভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

গাজায় চলমান যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও গণহত্যার অভিযোগের মুখোমুখি।