নির্বাচন নিয়ে বিএনপির শঙ্কা, বানচালের ষড়যন্ত্র দেখছে দলটি

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন এবং নির্বাচন কমিশনও সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু এই সুস্পষ্ট ঘোষণার পরও নির্বাচন বানচালের এক ‘অদৃশ্য ষড়যন্ত্র’ দেখছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের আশঙ্কা, পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন ইস্যু তৈরি করে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা চলছে।

সম্প্রতি এক বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘দেশ যাতে গণতান্ত্রিক অবস্থায় ফিরে আসতে না পারে এবং মানুষের ভোটের অধিকার যাতে বাস্তবায়িত হতে না পারে- সেটাকে ভণ্ডুল করে দেয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ষড়যন্ত্র চলছে’। তার এই বক্তব্যের সুরেই কথা বলেছেন দলের অন্য নেতারা। তাদের মতে, নির্বাচন বিলম্বিত করার কৌশল হিসেবেই কিছু রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী একের পর এক নতুন দাবি সামনে আনছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির মতো নতুন ব্যবস্থার দাবি তোলা হচ্ছে, যা আগে কখনো আলোচনার কেন্দ্রে ছিল না। তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি এবং সংবিধান পরিবর্তনের প্রস্তাবও নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্রের অংশ। জনগণ মনে করে এগুলো নির্বাচন বিলম্ব ও বাতিল করার ষড়যন্ত্র’।

একই বিষয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, কোনো দল পিআর পদ্ধতি চাইতেই পারে, কিন্তু সেজন্য তাদের উচিত রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে জনগণের রায় নিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে তা বাস্তবায়ন করা। তার মতে, ‘হঠাৎ করে এই দাবি সামনে এনে নির্বাচন যদি ঠেকাতে চায়, সেটা দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য এবং নির্বাচনের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না’।

বিএনপির নেতারা মনে করছেন, এই ষড়যন্ত্রের পেছনে সাবেক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের সহযোগীরাও জড়িত থাকতে পারে। যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের ভাষায়, ‘যারা ষড়যন্ত্র করছে, তারা জনগণ ও নির্বাচনকে ভয় পায়। আর পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারও নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে’। তবে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে যেকোনো ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবে।

এদিকে, জামায়াতে ইসলামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে আপত্তি না জানালেও দৃশ্যমান সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছে। অন্যদিকে, জুলাই সনদ কার্যকর ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এনসিপি। বিএনপি এই অবস্থানগুলোকেও নির্বাচন বানচালের বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই দেখছে।

তবে সব ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা সত্ত্বেও বিএনপি নেতারা জনগণের ওপর আস্থা রাখছেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘দেশের জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে গেছে। কোনো ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না। জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে চায়’।