রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বিস্তৃত বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পটি এখন সরকারের জন্য এক বড় বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক যুগেরও বেশি সময় আগে এর পরিকল্পনা করা হলেও নির্মাণকাজ এখনও অসমাপ্ত। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে এই প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে, যা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

প্রতীকী ছবি

প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায় এক স্থবির চিত্র। বিমানবন্দর, উত্তরা, আবদুল্লাহপুর ও টঙ্গীর মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে স্টেশনের কাজ অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সড়কের মাঝে বিআরটির জন্য নির্ধারিত লেনে বসানো লোহার রেলিংয়ে মরিচা ধরেছে। বছরের পর বছর ধরে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় পড়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে লিফট ও এস্কেলেটরের মতো মূল্যবান সরঞ্জাম। নির্মাণাধীন বাসস্ট্যান্ড ও ছাউনিগুলো সড়কের একটি বড় অংশ দখল করে রাখায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এর ওপর, পথচারী পারাপারের জন্য থাকা ফুটওভার ব্রিজগুলোর বেশিরভাগ ভেঙে ফেলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ রাস্তা পারাপার হতে বাধ্য হচ্ছে, যা প্রায়ই দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নিলেও এখন পিছু হটেছে। মূলত, জাতীয় নির্বাচনের আগে এই প্রকল্পের কাজ পুনরায় শুরু করাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ৬ হাজার ২৪০ কোটি টাকা করার একটি প্রস্তাব একনেক উপদেষ্টা পরিষদের সভায় তোলা হয়েছিল। একইসঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৯ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাবও ছিল। কিন্তু বিভিন্ন অসঙ্গতির কারণে সরকার সেই প্রস্তাব অনুমোদন না করে ফেরত পাঠিয়েছে।

এ বিষয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘এটি দানবীয় ও অপরিকল্পিত প্রকল্প। এ ধরনের অপরিকল্পিত ও দানবীয় মেগা প্রকল্পে ভুল নকশা চিন্তারও বাইরে। এ ধরনের প্রকল্প কীভাবে নকশা করা হয়েছে, কারা সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে- এগুলো আমরা তদন্ত করে দেখব।’ তার মতে, অধিক যাচাই-বাছাইয়ের পরই এ প্রকল্পের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

২০১২ সালে ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে অনুমোদিত এই প্রকল্পের কাজ ২০১৬ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু হতেই ২০১৭ সাল গড়িয়ে যায়। এরপর বারবার প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় সংশোধন করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হকের মতে, বিশ্বের অনেক দেশে বিআরটি একটি সফল ও সাশ্রয়ী পরিবহন ব্যবস্থা হলেও অভিজ্ঞতার অভাবে বাংলাদেশে এটি জটিল আকার ধারণ করেছে।

প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও বারবার সিদ্ধান্ত বদল হয়েছে। প্রথমে জোড়া লাগানো বাস, এরপর বৈদ্যুতিক বাস এবং পরে ডিজেলচালিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাস কেনার সিদ্ধান্ত হয়। অন্তর্বর্তী সরকার ১৩৭টি ডিজেলচালিত এসি বাসের সঙ্গে ৫০টি বিদ্যুৎচালিত বাস কেনার একটি সমন্বিত প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব আটকে যাওয়ায় সেই সিদ্ধান্তও এখন ঝুলে গেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা (এএফডি) এবং গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি এই প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে অর্থায়ন করছে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.