টিকটকের ‘সানবার্ন ট্যাটু’: মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসকদের সতর্কতা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটকে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ‘সানবার্ন ট্যাটু’ বা ‘রোদপোড়া উল্কি’ তৈরির একটি নতুন ধারা দেখা যাচ্ছে, যা নিয়ে ত্বক বিশেষজ্ঞরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির সতর্কতা দিয়েছেন। এই পদ্ধতিতে স্টিকার, টেপ বা সানস্ক্রিন ব্যবহার করে ত্বকের ওপর নকশা তৈরি করে বাকি অংশ ইচ্ছাকৃতভাবে রোদে পোড়ানো হয়।

সামাজিক মাধ্যমে মনোযোগ আকর্ষণ করতে এবং ‘দেখতে আকর্ষণীয় লাগে’—এমন যুক্তিতে অনেক তরুণ-তরুণী এই কাজ করলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

নিউইয়র্কের একজন ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্থনি রসি বলেন, ‘এই ধারা দেখতে যতই সৃজনশীল বা নিরীহ মনে হোক না কেন, যেকোনো রোদপোড়া আদতে ত্বকেরই ক্ষতি’। তিনি আরও বলেন, ‘সানবার্ন ট্যাটু ধারাটি ইচ্ছাকৃতভাবে অতিবেগুনি রশ্মির মাধ্যমে ত্বকের ক্ষতি করার সামিল, যার তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিণতি রয়েছে’।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রোদে পোড়ার কারণে ত্বকে দ্রুত বয়সের ছাপ পড়ে এবং মেলানোমার মতো মারাত্মক ক্যানসারসহ ত্বকের বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ডা. রসি তার পুরোনো রোগীদের কথা স্মরণ করে জানান, যারা কৈশোরে তেল বা অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করে ত্বক তামাটে করতেন, তারা এখন তার পরিণতি ভোগ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিয়মিত এমন রোগী পাই যারা কৈশোরে অতিরিক্ত রোদে পুড়েছেন। ত্রিশ বা চল্লিশের কোঠায় পৌঁছাতেই তাদের ত্বকে ক্যানসার-পূর্ববর্তী ক্ষত বা সরাসরি ক্যানসার দেখা দিয়েছে’।

যুক্তরাষ্ট্রের ডেলমারভা স্কিন স্পেশালিস্টসের আরেক ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. সারা মোঘাদ্দাম জানান, এই ধারাটি কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ভবিষ্যতে ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘১৫ থেকে ২০ বছর বয়সের মধ্যে পাঁচ বা তার বেশিবার ফোসকা পড়ে যাওয়ার মতো তীব্রভাবে ত্বক রোদে পুড়লে মেলানোমার ঝুঁকি ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়’।

ত্বকের কোষের মধ্যে থাকা ডিএনএ অতিবেগুনি রশ্মির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি ঘটিয়ে ক্যানসারের কারণ হতে পারে। আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজি (এএডি)-এর মতে, ত্বক যতবার তামাটে হয়, ততবারই এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

প্রতিরোধের উপায়

চিকিৎসকরা জানান, ‘ট্যান ট্যাটু’ বা তামাটে উল্কির চেহারা পেতে স্প্রে ট্যান একটি নিরাপদ বিকল্প হতে পারে। তবে স্প্রে ট্যান শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে ভেতরে গেলে কিছুটা ঝুঁকি থাকে এবং এটি ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয় না।

ত্বককে সূর্যের ক্ষতি থেকে বাঁচাতে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে এএডি কিছু পরামর্শ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—ছায়াযুক্ত স্থানে থাকা, দিনের বেলা সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলা, বাইরে যাওয়ার সময় চওড়া কিনারাযুক্ত টুপি ও রোদচশমা পরা এবং ব্রড-স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন ব্যবহার করা।

ডা. রসি সবশেষে মনে করিয়ে দেন, ‘অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতি খুবই মারাত্মক—ব্যাপারটা কেবল অল্প সময়ের ছবির জন্য নয়, এর পরিণতি জীবনভর বয়ে বেড়াতে হয়।’