১০ লেনের যুগে প্রবেশ করছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ব্যয় ৬২ হাজার কোটি টাকা

দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে কেন্দ্র করে এক যুগান্তকারী মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। চার লেনের বর্তমান কাঠামোকে বদলে দিয়ে এটিকে ১০ লেনের এক আধুনিক এক্সপ্রেসওয়েতে রূপান্তর করা হবে, যা দেশের বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আনুমানিক ৬২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মতো বহুজাতিক সংস্থার তহবিল থেকে এই বিশাল ব্যয়ের সংস্থান করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর আগে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোর হিসাবে ব্যয় ৭৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা ধরা হলেও পর্যালোচনার পর তা কিছুটা কমে আসে।

প্রস্তাবিত নকশা অনুযায়ী, ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়কের মূল অংশ হবে ছয় লেনের ‘অ্যাকসেস কন্ট্রোল হাইওয়ে’। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট হারে শুল্ক পরিশোধ করে যানবাহনগুলো এই পথে চলাচল করবে। এর দুই পাশে সব ধরনের যান চলাচলের জন্য দুটি করে মোট চারটি সার্ভিস লেন নির্মাণ করা হবে। ফলে মোট লেনের সংখ্যা দাঁড়াবে ১০টি। ২০১৬ সালে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হয়েছিল। সেই তুলনায় নতুন প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ১৬ গুণ বেশি। তবে প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আধুনিক সব সুবিধা যুক্ত করায় ব্যয়ের পরিমাণ বেড়েছে।

নতুন এই মহাসড়কে নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন অত্যাধুনিক ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ছয়টি মাল্টি-লেভেল উড়াল ক্রসিং, ২০টির বেশি উড়াল সার্ভিস ইন্টারচেঞ্জ এবং জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য তিন মিটার প্রশস্ত লেন। এডিবির সহায়তায় ইতোমধ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক ও সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সাব্বির হাসান খান জানান, দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি এই মহাসড়ককে সর্বাধুনিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যেই এমন নকশা করা হয়েছে। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ শুল্ক মহাসড়ক হবে, যা দ্রুত ও নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করবে।

তিনি আরও জানান, প্রকল্পের একটি অংশ পিপিপির আওতায় নির্মাণের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বর্তমানে এডিবি ঋণের অংশ এবং পিপিপির অংশ চূড়ান্ত করার কাজ করছে। এই প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাব চূড়ান্ত হতে আরও অন্তত ছয় মাস সময় লাগতে পারে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে এই মহাসড়কে দৈনিক ৩৫ হাজার ৪৮২টি যানবাহন চলাচল করত, যা ২০২৪ সালে বেড়ে ৪৬ হাজার ৫০১-এ দাঁড়িয়েছে। ক্রমবর্ধমান যানবাহনের এই চাপ মোকাবিলায় প্রকল্পটি সময়োপযোগী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।