ভাসানী সেতু খুলে দিলো তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার সম্ভাবনার দুয়ার

তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় নতুন যুগের সূচনা, খুলে দেওয়া হলো বহুল প্রতীক্ষিত ‘মওলানা ভাসানী সেতু’। উদ্বোধনের আগেই সেতুটি একনজর দেখতে ও পার হতে দুই প্রান্তেই ভিড় জমান হাজারো উৎসুক জনতা। তাদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে উন্মোচিত হলো এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত।

বুধবার (২০ আগস্ট) দুপুরে গাইবান্ধা প্রান্তে সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এ সময় সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্টের (এসএফডি) এশিয়া অপারেশনের মহাপরিচালক ড. সাঈদ আউদ আলশামারিসহ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সেতুটি তিস্তার দুই তীরে অবস্থিত গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন এবং কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নকে সরাসরি সংযুক্ত করেছে। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো কুড়িগ্রামের দক্ষিণ প্রান্তের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হলো। গাইবান্ধা এলজিইডির তত্ত্বাবধানে নির্মিত হলেও সেতুটির মূল সুফল পাবে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের মানুষ, বিশেষ করে কুড়িগ্রামের চিলমারী, উলিপুর ও রৌমারী উপজেলার বাসিন্দারা। তাদের জন্য ঢাকা যাতায়াতের সময় ও খরচ এখন অনেকটাই কমে আসবে।

বাংলাদেশ সরকার, সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ওফিড) যৌথ অর্থায়নে নির্মিত এই সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪৯০ মিটার এবং প্রস্থ ৯.৬০ মিটার। ৯২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রি-স্ট্রেসড কংক্রিট গার্ডার পদ্ধতির সেতুটিতে ৩১টি স্প্যান ও দুটি লেন রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই সেতু চালুর ফলে শিল্প ও কৃষিপণ্য পরিবহন সহজ হবে এবং ছোট ও মাঝারি কলকারখানা স্থাপনের সুযোগ তৈরি হবে। উন্নত সড়ক নেটওয়ার্কের কারণে শিক্ষার প্রসার ঘটবে এবং স্থানীয় পর্যায়ে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের আশা, নিকট ভবিষ্যতে চিলমারী নৌবন্দর চালু হলে এ অঞ্চল একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক কেন্দ্রে পরিণত হবে, যা জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখবে।

তবে সেতুর সব সুবিধা এখনই পুরোপুরি পাওয়া যাচ্ছে না। চিলমারী প্রান্তে কুড়িগ্রাম এলজিইডির নির্মাণাধীন ৫.২ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সেতু চালু হলেও শুধু সড়কের কারণে এর ব্যবহার থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউনুছ হোসেন বিশ্বাস জানান, প্রায় ২০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সংযোগ সড়কটির নির্মাণকাজ চলছে। তিনি বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে সড়কের কার্পেটিং করা সম্ভব হচ্ছে না। আবহাওয়া ভালো হলেই দুই সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে’।