মস্তিষ্কের ভাবনাতেই চলবে অ্যাপল ডিভাইস, পক্ষাঘাতগ্রস্তদের জন্য নতুন দিগন্ত

প্রযুক্তি বিশ্বকে চমকে দিয়ে এবার চিন্তার মাধ্যমেই অ্যাপল ডিভাইস নিয়ন্ত্রণের সুবিধা এলো। নিউইয়র্কভিত্তিক সংস্থা ‘সিনক্রন’ এমন একটি মস্তিষ্ক-কম্পিউটার ইন্টারফেস (বিসিআই) তৈরি করেছে, যা গুরুতর পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিদের শুধুমাত্র চিন্তার শক্তি ব্যবহার করে আইপ্যাড, আইফোন এমনকি ভিশন প্রো-এর মতো ডিভাইস ব্যবহারের সুযোগ করে দেবে।

এই যুগান্তকারী প্রযুক্তিটি হলো একটি চালের দানার আকারের যন্ত্র, যা মস্তিষ্কে স্থাপন করা হয়। সিনক্রনই প্রথম সংস্থা, যারা অ্যাপলের আনুষ্ঠানিক প্রোটোকল ব্যবহার করে মস্তিষ্কের সঙ্গে তারবিহীন সংযোগ স্থাপন করেছে। এর ফলে কোনো জটিল প্রক্রিয়া ছাড়াই ব্লুটুথের মাধ্যমে এই যন্ত্রটি অ্যাপল ডিভাইসের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, ঠিক যেমন একটি কি-বোর্ড বা মাউস যুক্ত হয়।

এই প্রযুক্তিটি ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার দশজন রোগীর ওপর সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন এএলএস (গুরুতর স্নায়ুরোগ) আক্রান্ত মার্ক জ্যাকসন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। জ্যাকসন জানান, হাত ব্যবহারের ক্ষমতা হারানোর পর তিনি প্রায় স্বাধীনতাহীন হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখন তিনি কেবল চিন্তা করেই আইপ্যাড চালাতে পারেন। অ্যাপ খোলা থেকে শুরু করে প্রিয়জনকে বার্তা পাঠানো বা খবর পড়া—সবই সম্ভব হচ্ছে।

ভিডিওটিতে মার্ক বলেন, ‘হাত দুটি ব্যবহারের ক্ষমতা হারানোর পর আমি ভেবেছিলাম, আমার স্বাধীনতা হারিয়ে গেছে। এখন আমার আইপ্যাডের মাধ্যমে আমি প্রিয়জনকে বার্তা পাঠাতে পারি, খবর পড়তে পারি এবং কেবল চিন্তা করেই পুরো বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারি।’

সিনক্রনের এই ব্যবস্থার পেছনে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এটি মস্তিষ্কের সংকেত বিশ্লেষণ করে সেগুলোকে ডিজিটাল নির্দেশে পরিণত করে। ব্যবহারকারী যখন আঙুল নাড়ানোর মতো কোনো চিন্তা করেন, মেশিন লার্নিং মডেল সঙ্গে সঙ্গে তা ডিভাইসের পর্দায় কাজে পরিণত করে।

এর একটি বিশেষ দিক হলো ‘সিগন্যাল স্ট্রেংথ মিটার’। এটি ব্যবহারকারীকে তার মস্তিষ্কের সংকেতের শক্তি বুঝতে সাহায্য করে। ফলে তারা নিজেদের মনোযোগ আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

এর আগে ইলন মাস্কের নিউরালিংকের মতো সংস্থাও এ ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেছে। তবে অ্যাপলের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি সিনক্রনকে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে। সিনক্রনের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা কার্ট হ্যাগস্ট্রম এই সাফল্যকে রোগী এবং প্রযুক্তি শিল্পের জন্য একটি ‘যুগান্তকারী পরিবর্তন’ বলে অভিহিত করেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রযুক্তি বর্তমানে চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলেও ভবিষ্যতে এটি সাধারণ মানুষের জন্যেও উন্মুক্ত হতে পারে। তখন হয়তো আপনার ফোন বা বাড়ির স্মার্ট ডিভাইসগুলোও চিন্তার ইশারায় চলবে, যা প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষের যোগাযোগের ধারণাই বদলে দেবে।