গবেষণা: ব্রকলি খেলেই কমবে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি

খাদ্যতালিকায় ব্রকলি রাখলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমন আশার কথা শুনিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, খাদ্যাভ্যাস হলো কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও পরিবর্তনশীল নিয়ামক। বিশেষ করে শাকসবজি ও আঁশযুক্ত খাবারের অভাব এবং অতিরিক্ত মদ্যপান এই রোগের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।

ফুলকপি, পাতাকপি, কেল ও ব্রাসেলস স্প্রাউটসের মতো ফুলকপি ঘরানার (ক্রুসিফেরাস) সবজিগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক হিসেবে আগে থেকেই পরিচিত। তবে ঠিক কী পরিমাণ খেলে এই উপকার পাওয়া যায়, তা এতদিন স্পষ্ট ছিল না। নতুন এই গবেষণায় সেই বিষয়টিই সামনে আনা হয়েছে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, এই ধরনের সবজিতে ‘গ্লুকোসিনোলেটস’ নামক এক বিশেষ প্রাকৃতিক যৌগ থাকে, যা শরীরে ঢুকে ‘আইসোথিয়োসায়ানেটস’ নামে শক্তিশালী পদার্থে পরিণত হয়। এই আইসোথিয়োসায়ানেটস শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে, ক্ষতিগ্রস্ত কোষ ধ্বংস করে এবং অস্বাস্থ্যকর কোষের বৃদ্ধি থামিয়ে ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

চীনের একদল গবেষক সম্প্রতি ১৭টি ভিন্ন গবেষণা পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। ওই গবেষণাগুলোতে মোট ৬ লাখ ৩৯ হাজার ৫৩৯ জন অংশগ্রহণকারী ছিলেন, যাদের মধ্যে ৯৭ হাজার ৫৯৫ জন কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। অংশগ্রহণকারীদের খাদ্যাভ্যাসের তথ্য এবং ক্যান্সারের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে দেখা যায়, যারা নিয়মিত ক্রুসিফেরাস সবজি খান, তাদের কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কম।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সবচেয়ে কম পরিমাণে এই সবজি খেয়েছেন, তাদের তুলনায় যারা সবচেয়ে বেশি খেয়েছেন, তাদের কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি ১৭ শতাংশ কম। প্রতিদিন প্রায় ২০ গ্রাম ব্রকলি খেলেই এই ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে শুরু করে এবং প্রতিদিন ৪০ গ্রাম পর্যন্ত খেলে এই উপকার স্থিতিশীল থাকে। এই গবেষণার ফলাফল ‘বিএমসি গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি’ নামক বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

তবে গবেষকরা এই গবেষণার কিছু সীমাবদ্ধতার কথাও উল্লেখ করেছেন। তারা লিখেছেন, ‘গবেষণার নকশায় ভিন্নতা, খাদ্যাভ্যাস মূল্যায়নের বিভিন্ন পদ্ধতি এবং অন্যান্য প্রভাবক থেকে যাওয়ার সম্ভাবনার মতো পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতার কারণে এই ফলাফল সতর্কতার সঙ্গে ব্যাখ্যা করা উচিত’।

এছাড়া, বেশিরভাগ গবেষণাই উত্তর আমেরিকা এবং এশিয়ার অংশগ্রহণকারীদের ওপর করা হয়েছে, যেখানে কোলন ক্যান্সারের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। এর ফলে, যেসব অঞ্চলে খাদ্যাভ্যাস ভিন্ন বা কোলন ক্যান্সারের প্রকোপ কম, সেখানকার মানুষের জন্য এই ফলাফল একইভাবে প্রযোজ্য না-ও হতে পারে। গবেষকদের মতে, এই ফলাফল যাচাই করার জন্য আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার মতো অঞ্চলে আরও উন্নত মানের গবেষণা প্রয়োজন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ২০ লাখ মানুষ কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং প্রায় ৯ লাখ ৩ হাজার ৮৫৯ জনের মৃত্যু হয়। এটি বিশ্বব্যাপী তৃতীয় সর্বাধিক প্রচলিত এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রাণঘাতী ক্যান্সার।

ফক্স নিউজের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসা বিশ্লেষক ড. মার্ক সিগেল এই গবেষণার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও এর ফলাফলের বিষয়ে নিজের মতামত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটি প্রায় এক লাখ রোগীর ওপর করা একটি ব্যাপকভিত্তিক পর্যালোচনা, যা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে ক্রুসিফেরাস সবজি সমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাস কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দেয়’।

তিনি আরও জানান, এই সবজিগুলোতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিশেষ করে গ্লুকোসিনোলেটস থাকে, যা শরীরে ক্যান্সারের কোষ তৈরি হওয়া কমাতে সাহায্য করে। তবে ড. সিগেলও গবেষণার সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘চরম প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, তেমনই শাকসবজি, বিশেষ করে ক্রুসিফেরাস সবজি সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস সেই ঝুঁকি কমায়’। তিনি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাস অনুসরণের পরামর্শ দেন, যেখানে এই ধরনের সবজি একটি অপরিহার্য অংশ।