গবেষণা: কম পানি পানে মানসিক চাপের প্রতিক্রিয়া বাড়ে ৫০ শতাংশ

যারা দৈনিক দেড় লিটারের কম পানি পান করেন, তাদের মানসিক চাপের প্রতিক্রিয়া অন্যদের তুলনায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি হতে পারে। লিভারপুল জন মুরস বিশ্ববিদ্যালয়ের (এলজেএমইউ) গবেষকদের পরিচালিত এক নতুন গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটি ‘জার্নাল অব অ্যাপ্লায়েড ফিজিওলজি’-তে প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণার জন্য ৬২ জন সুস্থ পুরুষ ও নারীকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। তাদের মধ্য থেকে কম ও বেশি পানি পানের অভ্যাস রয়েছে এমন ৩২ জনকে বেছে নেওয়া হয়। যারা দিনে দেড় লিটারের কম পানি পান করতেন, তাদের ‘কম-তরল’ এবং যারা নারীদের জন্য নির্ধারিত দুই লিটার ও পুরুষদের জন্য আড়াই লিটার পানি পানের সুপারিশ মেনে চলতেন, তাদের ‘উচ্চ-তরল’ গোষ্ঠী হিসেবে ভাগ করা হয়।

সাত দিন ধরে অংশগ্রহণকারীদের রক্ত ও মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের শরীরে পানির মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রয়োজনের চেয়ে কম পানি পান করা নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই মানসিক চাপজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়িয়ে তোলে।

এলজেএমইউ-এর স্কুল অব স্পোর্ট অ্যান্ড এক্সারসাইজ সায়েন্সের প্রধান গবেষক অধ্যাপক নিল ওয়ালশ জানান, মানসিক চাপের সময় হাতের কাছে একটি পানির বোতল রাখা দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। তিনি বলেন, ‘কর্টিসল হলো শরীরের প্রধান স্ট্রেস হরমোন। মানসিক চাপের সময় এই হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণ হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং বিষণ্ণতার ঝুঁকি বাড়ায়’।

গবেষক দলের সদস্য ড. ড্যানিয়েল কাশি জানান, পরীক্ষার সময় উভয় দলের অংশগ্রহণকারীরা সমান উদ্বেগ অনুভব করলেও শুধুমাত্র ‘কম-তরল’ গোষ্ঠীর মধ্যে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। তিনি আরও বলেন, ‘কম-তরল গোষ্ঠীর সদস্যরা বেশি তৃষ্ণার্ত না হলেও তাদের প্রস্রাবের রং গাঢ় ছিল, যা শরীরে অপর্যাপ্ত পানির স্পষ্ট লক্ষণ’। অপর্যাপ্ত পানি পানের সঙ্গে মানসিক চাপে কর্টিসল প্রতিক্রিয়ার গভীর সম্পর্ক পাওয়া গেছে, যা দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে পানিশূন্যতা কিডনির ক্ষতি, উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। পানিশূন্যতা ভ্যাসোপ্রেসিন নামক হরমোন নিঃসরণ করে, যা কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং মস্তিষ্কের স্ট্রেস-রেসপন্স কেন্দ্রকে প্রভাবিত করে কর্টিসল নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়।

গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন, প্রস্রাবের রং পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার শরীরে পানির মাত্রা সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন। হালকা হলুদ রঙের প্রস্রাব পর্যাপ্ত পানির লক্ষণ। তাদের মতে, শরীরকে পানিপূর্ণ রাখা মানসিক চাপকে আরও কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করতে পারে।