আপনি পড়ছেন

গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন ডেমোক্রেটিক পার্টির অভ্যন্তরীণ বিভক্তি চরমে উঠেছে। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে দলটি ইসরায়েল ও গাজা যুদ্ধ সংক্রান্ত দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রস্তাব পাস করাতে ব্যর্থ হয়েছে।

ম্যাপে গাজা উপত্যকার অবস্থান

বৈঠকের শুরুতে গাজায় নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তা নিশ্চিত, যুদ্ধের অবসান এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের দাবিতে একটি প্রস্তাব আনা হয়। প্রস্তাবটি ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির (ডিএনসি) সভায় কোনো বিরোধিতা ছাড়াই গৃহীত হয়েছিল। তবে এক অস্বাভাবিক পদক্ষেপে ডিএনসি সভাপতি কেন মার্টিন হঠাৎ করেই প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করে নেন।

তিনি জানান, ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবিতে আনা একটি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রস্তাব বাতিল হওয়ার পর দলে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর সুযোগ করে দিতেই তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছেন।

মার্টিন বলেন, ‘আমি জানি যে কেউ কেউ এ বিষয়ে পরিবর্তন আনতে আগ্রহী। এই মুহূর্তে দলের মধ্যে আলোচনা ও যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন।’ তিনি আরও জানান, সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পরই তিনি তার প্রস্তাবটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যাতে দলটি নিজেদের মধ্যে আলোচনার সুযোগ পায়। মার্টিন এ সমস্যা সমাধানে সব অংশীদারকে নিয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠনের কথাও জানিয়েছেন।

মার্টিনের প্রস্তাবটি মূলত দলের প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থানের প্রতিফলন এবং এটি ডেমোক্রেটিক পার্টির আনুষ্ঠানিক নীতির সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে দলের তরুণ ও উদারপন্থী অংশটি ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় আরও কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে আসছে। এই যুদ্ধের কারণে দলের সমর্থকদের মধ্যে ইসরায়েলকে মার্কিন সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রাখার বিষয়ে অসন্তোষ বাড়ছে।

ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ২৬ বছর বয়সী যুব সংগঠক অ্যালিসন মিনারলি গাজার বেসামরিক জনগণের ওপর নির্বিচার হত্যা ও দুর্ভিক্ষের কথা উল্লেখ করে ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

তিনি মার্টিনের প্রস্তাবের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, তার প্রস্তাবে এমন কিছু বিষয় অর্জনের কথা বলা হয়েছে যা আগেরটিতে উল্লেখ ছিল না। এর মধ্যে অন্যতম হলো ডেমোক্রেটিক ভোটারদের ইচ্ছার সঙ্গে ডিএনসি-র অবস্থানকে এক সারিতে আনা। তিনি করতালি ও হর্ষধ্বনির মধ্যে বলেন, ‘এই মুহূর্তে নেতৃত্ব দেওয়া, কথা শোনা এবং কঠিন আলোচনার প্রয়োজন। আমরা যুদ্ধবিরতির আহ্বানের পাশাপাশি এই ধ্বংসযজ্ঞকে স্বীকার করার এবং আমাদের দলের নির্বাচিত কর্মকর্তাদের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নির্ধারণের আহ্বান জানাই, যাতে আমরা আমাদের সমর্থকদের সঙ্গে একাত্ম হতে পারি।’

গত সপ্তাহে প্রকাশিত ইকোনমিস্ট/ইউগভ-এর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ডেমোক্রেটিক ভোটারদের মাত্র ২৫ শতাংশ ইসরায়েলকে মার্কিন সামরিক সহায়তা বৃদ্ধি বা বজায় রাখার পক্ষে। অন্যদিকে, ৩৮ শতাংশ ভোটার এই সহায়তা পুরোপুরি বন্ধ করার পক্ষে এবং আরও ২০ শতাংশ তা কমানোর পক্ষে মত দিয়েছেন, যা এই যুদ্ধ নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের প্রতিফলন।

ডিএনসি-র কমিটি কণ্ঠভোটে উদারপন্থীদের প্রস্তাবটি বাতিল করে দেয়। যদিও কেউ এর সরাসরি বিরোধিতা করেননি, তবে স্টেফানি বেলের আনা একটি সংশোধনী প্রস্তাবও বাতিল হয়। ওই সংশোধনীতে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা শুধু আক্রমণাত্মক অস্ত্রের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ রাখা এবং গাজায় আটক সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনার দাবি যুক্ত করার কথা বলা হয়েছিল।

এই বিভক্তি ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রকাশ পেল, কারণ দলটি আসন্ন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। গাজা সংকট দলের নির্বাচনী ফলে প্রভাব ফেলতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ‘ইনস্টিটিউট ফর মিডল ইস্ট আন্ডারস্ট্যান্ডিং-এর পলিসি প্রজেক্ট’ এবং ইউগভ-এর এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ২০২০ সালে জো বাইডেনকে ভোট দিয়েছিলেন এমন ভোটারদের মধ্যে যারা ২০২৪ সালের নির্বাচনে ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবছেন, তাদের ২৯ শতাংশের কাছে ‘গাজায় ইসরায়েলি সহিংসতা বন্ধ করা’ প্রধান বিবেচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। এই ভোটারদের মধ্যে এটিই ছিল সর্বাধিক উল্লেখিত বিষয়, যার পরেই ২৪ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল অর্থনীতি।

মার্কিন ভোটারদের জন্য সাধারণত পররাষ্ট্রনীতির কোনো বিষয় এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত এই যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং মানবিক সংকট পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় প্রায় ৬৩,০০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই সামরিক অভিযানে পুরো উপত্যকাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং সেখানে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, গাজায় চালানো যুদ্ধের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা চলছে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.