নবজাতক ইউনিটে সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণ থেকে সরে যাচ্ছে ইউনিসেফ

আগামী সেপ্টেম্বর থেকে দেশের বিশেষায়িত নবজাতক পরিচর্যা ইউনিটগুলোর (স্ক্যানু) চিকিৎসা সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণে আর সহায়তা দেবে না ইউনিসেফ। এ কারণে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে নবজাতকদের জীবনরক্ষাকারী সেবা বিঘ্নিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তারা।

ইউনিসেফ গত ১২ বছর ধরে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে স্ক্যানুতে যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ চালিয়ে আসছিল। গত মাসে সংস্থাটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে (ডিজিএইচএস) জানিয়েছে, চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর বর্তমান চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আর এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে না

ডিজিএইচএস এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ৫২ জেলায় মোট ৬০টি হাসপাতালের স্ক্যানুতে গুরুতর অসুস্থ ও অপরিণত নবজাতককে সেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রতি বছর বাংলাদেশে ৩০ থেকে ৩২ লাখ শিশুর জন্ম হয়, এর মধ্যে প্রায় ৩ লাখ বা ১০ শতাংশ শিশু অপরিণত জন্মগ্রহণ করে। এছাড়া অনেক শিশু গুরুতর সংক্রমণেও ভোগে, যাদের জন্য স্ক্যানুর সেবা অত্যন্ত জরুরি।

জাতীয় শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, সরকার চাইলে ইউনিসেফের সরে যাওয়া সামাল দিতে সক্ষম। তবে দ্রুত একটি ট্রানজিশন পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে সেবা বিঘ্নিত না হয়।

ডিজিএইচএস এর ২০২৪ সালের মাঝামাঝি মূল্যায়নে দেখা যায়, স্ক্যানুতে থাকা মোট চার হাজার ১৫৯টি যন্ত্রের মধ্যে ৮০২টি (২০%) অকেজো, আর ২০৯টি মেরামতের অযোগ্য। এছাড়া ২১৩টি যন্ত্র এক দশকেরও বেশি পুরনো।

এ অবস্থায় ইউনিসেফের সরে যাওয়া আরও সংকট তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

ডিজিএইচএসের হাসপাতাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট লাইন ডিরেক্টর জয়নাল আবেদিন টিটো বলেন, হাসপাতালগুলোকে ইতিমধ্যেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন সেবা ব্যাহত না হয়। ছোটখাটো সমস্যা স্থানীয় টেকনিশিয়ানরা সামলাবেন, আর বড় সমস্যায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় ইলেকট্রো–মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (এনইএমইএমডব্লিউ অ্যান্ড টিসি) সহযোগিতা করবে।

তবে কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, স্ক্যানুর সরঞ্জাম অত্যন্ত জটিল এবং নিয়মিত বিশেষায়িত রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। অথচ এনইএমইএমডব্লিউ অ্যান্ড টিসিতেও পর্যাপ্ত জনবল নেই; ৯৫টি পদের মধ্যে ৫৮টি শূন্য রয়েছে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফ প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, ২০১১ সাল থেকে সংস্থাটি স্ক্যানু ও নবজাতক স্থিতিশীলকরণ ইউনিট (এনএসইউ) প্রতিষ্ঠা ও সম্প্রসারণে সহায়তা করেছে। ২০২২ সালে ডিজিএইচএস ২০০-র বেশি বায়োমেডিকেল টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিয়েছে এবং ইতিমধ্যেই ৬০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে সরকার পুরোপুরি দায়িত্ব নেওয়ার। আমরা শুরুতে পথ দেখিয়েছি, দক্ষতা তৈরি করেছি। এখন টেকসইভাবে এই কাজ চালিয়ে নেওয়া সরকারের দায়িত্ব।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সৈয়দুর রহমান জানিয়েছেন, স্ক্যানুর রক্ষণাবেক্ষণ এখন সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে চালানো হবে। এ জন্য দুটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, তবে সেগুলো এখনো অনুমোদন পায়নি।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, প্রকল্প অনুমোদনে কিছুটা সময় লাগলেও স্ক্যানু সেবা বন্ধ হবে না।