সীমান্ত হত্যা নিয়ে বিএসএফের সঙ্গে তীব্র মতানৈক্য বিজিবির

প্রকাশ্য দিবালোকে এক বাংলাদেশি কিশোরকে কেন গুলি করে হত্যা করা হলো—এমন কঠোর প্রশ্ন তুলে সীমান্তে হত্যাকাণ্ড নিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বক্তব্যের সঙ্গে সরাসরি দ্বিমত পোষণ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী প্রশ্ন তোলেন, ‘সেই শিশুটি সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল?’

এর আগে বিএসএফ মহাপরিচালক শ্রী দালজিৎ সিং চৌধুরী দাবি করেন, তাদের সদস্যরা আক্রান্ত হলেই কেবল আত্মরক্ষার চূড়ান্ত উপায় হিসেবে গুলি চালান। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে অনুপ্রবেশকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ৩৫ জন বিএসএফ সদস্য আহত হয়েছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৬তম সীমান্ত সম্মেলনের সমাপনী দিনের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই মতভিন্নতা প্রকাশ পায়।

সংবাদ সম্মেলনে বিএসএফ প্রধান বাংলাদেশে ‘পুশইন’ বা লোকজনকে ঠেলে পাঠানোর বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ আইনগত চ্যানেল অনুসরণ করে করা হচ্ছে এবং শুধুমাত্র অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদেরই বাংলাদেশে পাঠানো হয়। তিনি জানান, ইতোমধ্যে ৫৫০ জনকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং আরও ২ হাজার ৪০০ জনের মামলা যাচাই-বাছাই চলছে, যে প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনও সহযোগিতা করছে।

অনেক সময় ভারতীয় ও রোহিঙ্গা নাগরিকদেরও বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘যদি কেউ ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণিত হয়, ভারত তাকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করবে।’

চার দিনব্যাপী এই সম্মেলনে সীমান্ত নিরাপত্তা, মাদক, অস্ত্র ও মানবপাচার এবং অনুপ্রবেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনার কেন্দ্রে ছিল। উভয় পক্ষই মাদক, অস্ত্র ও মানবপাচার রোধে একসঙ্গে কাজ করার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। একইসঙ্গে সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ না করা এবং পাচারকারীদের রুখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্প্রতি ভারতে নিবন্ধিত ৪৮ জন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়, যাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করা হয়।

আলোচনা শেষে সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ, রাতে টহল জোরদার এবং সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের জন্য যৌথভাবে সচেতনতামূলক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নেওয়ার বিষয়ে দুই বাহিনী সম্মত হয়েছে। এছাড়া নদী ও পানিবণ্টন এবং সীমান্তবর্তী উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েও উভয় পক্ষ মতবিনিময় করে।

ঢাকার পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ২১ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল এবং বিএসএফ মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করে।