ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে এবার ৩২ বস্তা টাকা!

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার মিলেছে রেকর্ড পরিমাণ ৩২ বস্তা টাকা, যা অতীতের সব সংগ্রহকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। শনিবার সকাল ৭টা থেকে এই দানবাক্সগুলো খোলার পর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ এই অর্থ গণনার কাজ শুরু হয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, এবারের দানের পরিমাণ আগের সব রেকর্ড ভেঙে দেবে। এর প্রধান কারণ হলো, মসজিদের ১০টি দানবাক্স অন্তত এক মাস আগেই টাকায় ভরে গিয়েছিল। এরপরও দান অব্যাহত রাখতে ৩টি অতিরিক্ত ট্রাঙ্ক যুক্ত করতে হয়েছিল। বস্তার হিসাবেও এবার সর্বোচ্চ ৩২ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে, যা গতবারের ২৮ বস্তা থেকে বেশি।

এর আগে গত ১২ এপ্রিল সর্বশেষ দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন ২৮ বস্তা টাকা গণনা করে ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা পাওয়া গিয়েছিল, যা সেই সময় পর্যন্ত সর্বোচ্চ ছিল। এছাড়া তখন বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা, রুপা ও হীরার গয়নাও মিলেছিল।

এই বিশাল অঙ্কের টাকা গণনার কাজে অংশ নিচ্ছেন পাগলা মসজিদ মাদরাসা ও আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার ৩৪০ জন শিক্ষার্থী এবং রূপালী ব্যাংকের ১০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ৪৪০ জন। পুলিশ ও আনসার সদস্যরা সার্বিক নিরাপত্তায় রয়েছেন এবং মসজিদ-মাদরাসার ৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের সহায়তা করছেন। চার মাস ১৮ দিন পর এবার মসজিদের দানবাক্সগুলো খোলা হলো।

শনিবার সকালে দানবাক্স খোলার সময় উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান এবং পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী। এছাড়াও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাপোর্ট) মিজাবে রহমত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জেসমিন আক্তার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. এরশাদুল আহমেদ, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুল হাসান মারুফ এবং রূপালী ব্যাংকের এজিএম মোহাম্মদ আলী হারেছীসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান জানিয়েছেন, দানবাক্স থেকে প্রাপ্ত সব টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এই অর্থের লভ্যাংশ থেকে অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্তদের সহায়তা করা হয়ে থাকে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, আজ পর্যন্ত পাগলা মসজিদের ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৯১ কোটি টাকা জমা রয়েছে।

এই ঐতিহাসিক মসজিদে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ দান করতে আসেন। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে এখানে দান করার পর তাদের মনের আশা পূর্ণ হয়েছে, আর এ কারণেই দিন দিন দানের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কিশোরগঞ্জ শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির উপর গড়ে ওঠা পাগলা মসজিদ বর্তমানে ৫.৫ একর ভূমির উপর একটি অত্যাধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্সে রূপান্তরিত হয়েছে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন যে, সকাল থেকে দানবাক্স খোলা, বস্তায় ভরে টাকা আনা, গণনা শেষে ব্যাংকে জমা দেওয়া পর্যন্ত সব ধাপেই পুলিশ সদস্যরা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিচ্ছেন। গণনার দিন ছাড়াও অন্যান্য দিনগুলোতেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সিন্দুকগুলোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকে।