অন্তর্বর্তী সরকার: নুরুল হকের ওপর হামলায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, হবে নিরপেক্ষ তদন্ত

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নৃশংস লাঠিপেটার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই হামলায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না এবং পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা হবে বলে সরকার অঙ্গীকার করেছে।

শনিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং গণমাধ্যমকে এ নিন্দা জানানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে। সরকার মনে করে, এ ধরনের সহিংসতা ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিতের ঐতিহাসিক সংগ্রামে জাতিকে একত্র করা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্পিরিটের ওপর আঘাত।

বিবৃতিতে বলা হয়, সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে তদন্ত সম্পন্ন করা হবে। প্রভাব বা পদমর্যাদা যাই হোক না কেন, জড়িত কোনো ব্যক্তি জবাবদিহি থেকে রেহাই পাবে না। স্বচ্ছতা এবং দ্রুততার সঙ্গে এর বিচার সম্পন্ন করা হবে।

নুরুল হক এবং তার দলের অন্য আহত সদস্যদের চিকিৎসা কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য একটি বিশেষায়িত মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তাদের সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রয়োজনে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থাও করা হবে।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টি (জাপা) ও গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। জাপার কার্যালয়ের সামনে দিয়ে গণ অধিকার পরিষদের একটি মিছিল যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লাঠিপেটায় গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এই সংঘর্ষ নিয়ে দুই পক্ষের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য রয়েছে। গণ অধিকার পরিষদ বলেছে, জাপার নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। অন্যদিকে, জাপা দাবি করেছে, গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরাই তাদের ওপর হামলা করেছেন।

এ ঘটনার পর গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে গণমাধ্যমকে জানান, জাপার হামলার প্রতিবাদে গণ অধিকার পরিষদের কার্যালয়ের সামনে তারা যখন সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, ঠিক সেই সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের ওপর হামলা চালান। এতে সভাপতি নুরুল হকসহ শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। গুরুতর আহত নুরুল হকসহ ছয়জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে।

অন্যদিকে, এ ঘটনায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) গত শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, জননিরাপত্তা রক্ষার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলপ্রয়োগে বাধ্য হয়। এই ঘটনায় সেনাবাহিনীর পাঁচজন সদস্য আহত হয়েছেন বলে আইএসপিআর উল্লেখ করে।

অন্তর্বর্তী সরকার তাদের বিবৃতিতে জানায়, নুরুল হক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা এবং গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও জনগণের অধিকার আদায়ের পক্ষে সাহসী ভূমিকা রাখা একজন রাজনীতিবিদ। ২০১৮ সালে শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে কোটা সংস্কার আন্দোলনে তিনি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন। একজন ছাত্রনেতা হিসেবে তিনি তরুণদের সংগঠিত করেছিলেন এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে নির্ভীকভাবে দাঁড়িয়েছিলেন। চব্বিশের জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং হেফাজতে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছিল। নুরুল হকের ভূমিকা একটি স্বাধীন, সুষ্ঠু এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য জনগণের সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।

অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির প্রতি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে, আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই অনুষ্ঠিত হবে বলে পুনর্ব্যক্ত করে সরকার। জনগণের ইচ্ছাকে জয়ী হতে দেওয়া হবে এবং কোনো অশুভ শক্তিকে গণতন্ত্রের পথে অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে দেওয়া হবে না বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।